লকডাউন।। আনোয়ার রশীদ সাগর
বাবার অসুস্থতার
সংবাদে অস্থির হয়ে পড়ে মমতা। মাথার ভিতর ঘুর-পাক খেতে থাকে। একই হলে থাকে
একই গ্রামের লতিফা। লতিফা দু'বছরের বড়। লতিফাও বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে
পড়ে। কিন্তু যাবে কিভাবে? আঘাত পাওয়া পাখির মত ডানা ঝাপটাতে
ঝাপটাতে,দাপাতে-দাপাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে লতিফা। আর মমতা ঝড়বৃষ্টিতে ভেজা
শালিকের মত অসহায় দাঁড়িয়ে থাকে হলের বারান্দায়।
মমতা কোনোদিন তার বাবার মুখোমুখি হয়নি। তিন ভাই ও দু'বোনের ছোট বোন মমতা। অনিচ্ছাকৃতভাবে মায়ের পেটে এসেছিল সে।
একদিন বড় বোন মদিনা তার স্বামীকে বলে, যদি কিছু মনে না করো তবে একটা কথা বলবো?
মমতার বড় দুলাভাই অভয়বাণী দিলে,
মদিনা
বলে,মায়ের পেটে সন্তান এসেছে। লজ্জায় মা তোমার সামনে আসতে পারছে না-ঘর
থেকেও বেরুচ্ছে না। তাই বাপজান ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে সন্তানটি নষ্ট
করে ফেলতে বলেছে।
দুলাভাই শুনে হোহো করে হেসে বলে,আরে
নষ্ট করতে হবে না। শীগগির মাকে বোঝাও। এটা তো স্বাভাবিক বিষয়। তুমি বলতে
না পারলে,আমিই যাচ্ছি। মদিনার স্বামী উঠে শ্বাশুরির ঘরের দিকে যেতে চায়।
অমনি দ্রুত মদিনা স্বামীর হাত চেপে ধরে ঘরের মধ্যে বসিয়ে রাখে,তোমাকে বলতে হবে না,আমিই বলবো।
দুলাভাই বলে,তাহলে যাও ভালো করে বুঝিয়ে বলো।
তখনও মদিনার ছেলে রুবেলের বয়স এক বছর।
সেই ভাগ্নের এক বছরের ছোট খালা হচ্ছে,মমতা।
দুলাভাইয়ের রাখা নাম। সে নামেই মমতা বড় হতে থাকে।
মমতা সব সময় ওই বাড়ির মা-ঘেষা খুদে প্রাণি। মা ছাড়া দুনিয়ায় তার তেমন কেউ নেই। আর দুলাভাই
এ
বাড়িতে কালে-ভদ্রে এলে,কাছে ডেকে নিয়ে হেসে হেসে বলে, আরে হারিয়ে যাওয়া
মমতা -শালি আমার, তুই আমার হুকুম-হাকাম শুনবি। মমতা ঘাড় নেড়ে দৌড়িয়ে মা'র
কাছে চলে যেতে চায়। দুলাভাই ধরে ফেলে,আদর করে। তখন মমতা সাহস পেতে থাকে। এক
সময় সাহসী হয়েও ওঠে। তারপর কাছে কাছে ঘুরঘুর করতো।
যা
যা হুকুম করতো-যা বলতো, সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো। শহরের ব্যবসায়ী
দুলাভাই। মদিখানার বড় দোকান রয়েছে, হাড়িপাতিলসহ রকমারী নিত্য প্রয়োজনীয় সব
থাকে দোকানে। খরিদ্দার ফেরার পথ থাকে না। আদর্শ ব্যবসায়ী হিসেবে সুনামও
রয়েছে। বেশ আয়-ইনকামও হয়। তাই মদিনা তার ছেলের জন্য কিছু কিনলে মমতার জন্যও
কিনতো।
প্রয়োজনে কারো মাধ্যমে পাঠিয়েও দিতো। মমতার
মা'ও বড় জামাই বলতে পাগল। বড় জামাই আর মদিনার গল্প প্রতিবেশীদের কাছে বলে
ফুরাতে পারতো না।
বাবা মকছেদ আলী সংসার-গৃহস্থালি
নিয়ে ব্যস্ত থাকে। দু'ছেলে মালয়েশিয়ায় থাকে। ছোট ছেলে রমজান আলী বাবার সাথে
মাঠ-ঘাট সংসার দেখাশুনা করে। তিন ছেলেই হাইস্কুল পর্যন্ত লেখাপড়া করে
কর্মক্ষেত্রে লেগে গেছে।
মকছেদ আলী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,গ্রামে বিচার আচারও করে বেড়ায়। বেশ সম্মানের সাথেই জীবন চলছিল।
মমতা
একদিন হাইস্কুল উঠে পড়ে। লেখাপড়ায় ভালো। গ্রামের অবস্থা সম্পূর্ণ মণ্ডল
মানুষের মেয়ে,চারিদিক থেকে ঘটক আসা শুরু করে। মেয়েটার বিয়ে দাও মণ্ডল?
মকছেদ
মণ্ডল দাড়ির ভিতর আঙ্গুল দিয়ে বিলি করতে করতে বলে,বাবা-রে বিয়ে তো দেবই।
জামাই যে রাজি হয় না। ঘটকরাও নাছোড় বান্দা জামাই পর্যন্তও যায়। জামাই ধমক
দেয়,ক্যান লেখাপড়া করছে-করুক। ওতো ভালোই পড়ালেখায়। ঘটক মুখ চুলকাতে চুলকাতে
ঘুরে যায়।
এভাবে মমতা কলেজে যায়। ভর্তি হয় দুই কিলোমিটার দূরে উপজেলা শহরের কলেজে।
মকছেদ
আলীও মেয়ের বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে চায়। কিন্তু শিক্ষিত জামাইয়ের কাছে কথা
উঠিয়ে পার পায় না। জামাইয়ের একই কথা,বাবা পড়ুক না!- এখন মেয়েরা বড় কিছু
হতে পারে। দেখছেন না,আমার ছোট বোনটি কলেজের শিক্ষক। ভাইগুলো সব চাকুরী করে।
আমি বিএ পাশ করে না-হয় ব্যবসায় করি। তাতে কী?- ওরা তো নিজেদের গড়ে
তুলেছে।
জামাইয়ের কথায় মকছেদ আলী আর কোনো উত্তর খুঁজে পায় না। নীরব থাকে।
মমতা একদিন কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে প্রথম হয়ে পাশ করে। পরীক্ষার ফলাফল দেখে অবাক হয় তার দুলাভাই।
এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পালা। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে।
মকছেদ
আলী বলেছিল, বাফু অতদূরে ভর্তি না হয়ে বাড়ির পাশে কলেজেই পড়ুক। জামাই
বলেছিল, আপনী বুঝবেন না, মমতা যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যায়,
সেটা চরম ভাগ্যের ব্যাপার।
মকছেদ আলী বলে,বাফু মেয়েছেলে মানুষ-কী হতে কী হয়।
জামাই হাসতে হাসতে বলে,কিচ্ছু হবে না। এই এলাকার শতশত মেয়ে ওখানে লেখাপড়া করে।
শেষমেষ জামাইয়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে মকছেদ আলী জামাই বাড়ি থেকে নিজ বাড়ি ফিরে আসে।
মায়ের সাথে বাবা এসে কথা বলতে থাকে। মমতা খুঁটিতে হেলান দিয়ে আড়াল থেকে শোনে।
মমতার খুশী ঠেকাই কে!- সে তো মনে মনে এটাই চেয়েছিল।
মমতা এলাকার সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই 'লোকপ্রশাসনে' পড়ার সুযোগ পেয়ে যায়।
এবার
ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকায় যেতে হবে। যাবে কার সাথে?- শেষে সীদ্ধান্ত হয়,
মকছেদ আলী তার গ্রামের এক বন্ধু রহিমবক্সকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় যাবে। মমতা তো
যাবেই।
যে মেয়ে কোনোদিন বাবার মুখোমুখি হয়নি,সেই
মেয়ে বাবার সাথে ঢাকায় যাবে! -বুকের মধ্যে দুরু-দুরু করে। তবুও আনন্দ দেশের
সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যাবে।
।২।
রাতের
বেলা ভেড়ামারা স্টেশন থেকে ইন্টারসিটি ট্রেনে ওঠে তিনজনই। বাবা মকছেদ আলীর
পাশে না বসে মমতা বসে চাচা রহিমবক্সের পাশে। রহিম বক্স লোকটা একটু
স্বাস্থ্যবান। ঘুম বেশী,ফড়াত-ফড়াত নাক ডাকতে থাকে। মাঝে মাঝে মকছেদ আলী
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে। কোনোকিছুরই চোখ এড়ায় না মমতার। কেন যেন
বাবার জন্য মায়া লাগে। জন্মের পর থেকে তার বাবা ঠিকমত মমতার দিকে তাকিয়েও
দেখেনি। আজ এই আলো-আঁধারিতে ট্রেনের ভিতর মনে হচ্ছ বাবা খুব নরম চোখে বার
বার তাকে দেখছে। মমতা মনে মনে নিজেকে একটু ধিক্কারই দেয়,কেন যে বাবার কাছে
বসলাম না। তার আফসোস হতে থাকে। আসার সময় মা গোপনে চোখের পানি আঁচলে মুছেছে।
বাবা মানুষটা পুরুষ,মুখে কিছু না বললেও তারও মন পুড়ছে।-বুঝতে পারে মমতা।
রাত শেষের দিকে। প-প-প শব্দ হচ্ছে। ট্রেনটা বড় গলায় হুঙ্কার দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে,কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছিয়ে যাবো।
যথাসময়ে কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন থামে। মকছেদ আলী ডাকতে থাকে,এই রহিম-রহিম ওঠ্-ওঠ্।
রহিমবক্স
ধুসমুস করে উঠে পড়ে। ভিড় কম। ধীরে ধীরে সবাই লাইন দিয়ে নামতে থাকে। সামনে
রহিমবক্স,মাঝখানে মমতা এবং পিছনে বটবৃক্ষের ছায়ার মত বাবা মমতাকে আগলিয়ে
নিয়ে যেতে থাকে। গেটে এসে নামে।
রহিমবক্স ঢাকাতে
বহুবার এসেছে, থেকেছেও। তারই ভাইয়ের মেয়ে লতিফা। লতিফা দু'বছর আগেই
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। লতিফার মামা-খালারাও ঢাকাতে চাকুরী সূত্রে
থাকে।
রহিম বক্স মকছেদ আলীকে বলে, চ রেললাইনটা পার
হয়েই একটু হেঁটে যায়। তারপর ফকিরাপুলে একটা আবাসিক হোটেলে উঠে হাতমুখ ধুয়ে
নাস্তাটাস্তা করে যেতে হবে। মমতারও হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হতে হবে।
মকছেদ আলী তাতেই রাজি হয়। তারপরও অজানা আশঙ্কা তার মনে,আহা মেয়েটাকে শহরে একা একা রেখে যাবো?
ভোর গড়িয়ে হুহু করে সূর্যটা ওঠে পূর্ব আকাশে। ধীরে ধীরে আলোর আভায় মায়াবী ভোরের আধো আলো হারিয়ে, ব্যস্ত আলোয় আলোকিত হয় শহর।
তারা একটা আবাসিক হোটেলে ওঠে। তারপর রহিমবক্স আস্তে আস্তে প্রয়োজনীয় সব বলে বলে দেয়। সে রকমই করে মকছেদ আলী ও মমতা।
মকছেদ আলী বলে,যাও মা ওখানে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নাও।
রহিমবক্স বলে,মা তুমি পিছাব-পায়খানা সবই সেরে নিবা।
মমতা
মনে মনে লজ্জাবোধ করলেও প্রয়োজন বাঁধা মানে না। মমতা দ্রুত বাথরুমে ঢুকে
তার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ড্রেসটাও পাল্টিয়ে নেয়। মমতার কাছে নিজেকে বেশ
হালকা-হালকা লাগে।
ষাটোর্ধ বাবা ও চাচা মমতার ঝটপট পরিস্কার হওয়া দেখে মুগ্ধই হয়। তাদের চোখে-মুখে সুখের ছায়া ভেসে ওঠে।
এরপর
নাস্তা করে একটা অটো নিয়ে চলতে চলতে পৌঁছিয়ে যায় ইউনির্ভাসিটিতে। আগে
থেকেই মোবাইলে লতিফাকে বলা ছিল। সে এসে সালাম দেয়। মকছেদ আলী লতিফাকে দেখে
মনে মনে স্বস্তি অনুভব করে।
সঙ্গে করে নিয়ে যায় হলের বারান্দায়।
ভিতরে
পুরুষদের যাওয়ার অনুমতি না থাকায়,দুই মুরুব্বিকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে
হয়। বেশখানিক পরে মকছেদ আলী মমতার কাছে এগিয়ে যায়,মা-রে দেখেশুনে থাকিস্।
মমতা
আর চোখের পানি ঠেকাতে পারে না,এই আমার বাবা!- যে বাবা কোনোদিনও জিজ্ঞাসা
করেনি কোনোকিছু। সে বাবার চোখেও পানি টলমল করছে,না-জানি অজানা কষ্টে বুকটা
তার ফেঁটে যাচ্ছে।
লতিফা বুঝতে পেরে বলে,চাচা আপনী কোনো চিন্তা করবেন না, আমি ওকে ছোটবোনের মত দেখে রাখবো।
মকছেদ আলী কথাহীন ঘাড় নাড়ে,ঠিক আছে মা।
মমতার এখন খুব মা'র কথা মনে হচ্ছে। না-জানি মা হয়তো না খেয়ে আমার জন্য কাঁদছে।
মনে মনে ভাবে, মাকে জোরো-সোরেই বাবা বলেছিল অতদূরে পড়তে গিয়ে কী হবে?- বাড়ির পাশের কলেজেই পড়ুক।
কিন্তু মমতায় জিদ ধরেছিল,মা'র কাছে কান্নাকাটিও করেছিল। এখন তার মনে হচ্ছে বাবার কথা শোনায় ঠিক ছিল।
লতিফা মমতাকে সঙ্গে করে ভিতরে চলে যায়। খানিক দাঁড়িয়ে থেকে মকছেদ আলী ও রহিৃবক্সও চলে আসতে থাকে বাড়ির পথে।
।৩।
এভাবেই
থাকে মমতা। থাকতে থাকতে মানিয়ে নেই জীবনের সব কিছু। প্রথমদিকে ছোট্ট একটা
কক্ষে তিনজন থাকার কথা ভাবতেও পারছিল না। আবার অপর দু'জনের চোখের সামনে
জামাকাপড় বদলানো, ব্রা খুলে এলোমেলো ঝুলিয়ে রাখা, পাতলা কোনো ফতোয়া বা
গেঞ্জি শরীরে পরে ঘুরে বেড়ানো একেবারে অন্যরকম মনে হচ্ছিল। কিন্তু চলতে তো
হবেই। একদিন লতিফা রুমে ঢুকেই পা'জামা খুলে দড়িতে ঝুলিয়ে দেয়, মমতা আর চোখ
খুলে রাখতে পারছিল না। লতিফা বুঝতে পেরে ওই অবস্থায় হাসতে হাসতে মমতার
সামনে এসে বলে,দেখো তো আমার শরীরের নিম্ন অংশ কি দেখা যাচ্ছে?
মমতার থুতনি ধরে উঁচু করে বলে, আরে পাগলি গায়ে সালোয়ার আছে না!
ওড়নার মধ্যে ঘাড় গুজে দিয়ে মমতা মাথা ঝাকায় অর্থাৎ না দেখা যাচ্ছে না।
লতিফা মমতার পিঠে হাত দিয়ে বলে,
তুমিও
করবে-সকলের সামনেই জামাকাপড় পাল্টাবে। দেখবা এটায় হবে-এটায় হলের জীবন।
সারাদিন ক্লাস, ক্যাম্পাস,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বড় বিরক্ত লাগে যখন
রুমে আসি। তখন আর ধৈর্য্য থাকে না। যত তাড়াতাড়ি পারি, একটু স্বস্তির
নিঃশ্বাস নিই।
মমতা কিছু না বলে ফ্যাল-ফ্যাল করে চেয়ে থাকতো লতিফার দিকে।
উত্তরের
অপেক্ষায় না থেকে লতিফা চলে যেতো বাথরুমে। তারপর ছটপট ডাইনিঙে চলে যেতো।
আবার তাড়াহুড়ো করে খেয়ে এসে জামাকাপড় পরে লাইব্রেরিতে চলে যেতো। যাওয়ার সময়
বলতো, তোমার সামনেও চ্যালেঞ্জ। গ্রাম থেকে জিদ করে এসেছো-এখন তো অনেক বড়
হতে হলে পড়তে হবে,আড্ডাও দিতে হবে।
মানুষ অনুকরণ
প্রিয়। লতিফাকে দেখতে দেখতে মমতারও এ সব অভ্যাস হয়ে গেছে। একায় ট্রেনে উঠে
বাড়ি যায় অথবা বাসের টিকিট নিয়ে ফিরে আসে। ক্যাম্পাসে মুক্তভাবে ঘুরে
বেড়ায়। লাইব্রেরিতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। পড়াশুনাও করে।
দুটি বছর কেটে যায়।
পৃথিবী
ব্যাপী আসে মহামারী করোনা'র মহা ছোবল। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল বন্ধ
ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেতে চায় না। কেউ প্রাইভেট পড়িয়ে
লেখাপড়ার খরচ চালায়,কারো কারো একটা বা দুটো বিষয় পরীক্ষা হতে বাকী রয়েছে।
সেশনজোটের ভয়ে অথবা চাকুরীর বয়স চলে যাওয়ার ভয়ে শিক্ষার্থীদের মাথাভারি হয়ে
যায়। বিভিন্ন সমস্যার কথা ভেবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে থাকে। এই
মহামারীর বিষয়ে শুরুতে কারো ধারনায় ছিল না যে,কতটা বিপর্যয় হতে পারে।
এদিকে হলে থাকতে- থাকতেই মমতার বাড়ি থেকে খবর আসে, দ্রুত বাড়ি চলে আসো,তোমার বাবা খুবই অসুস্থ-মরণাপূর্ণ অবস্থা।
গাড়ি-ঘোড়া সব বন্ধ। তখন মহাবিপদ। অস্থিরতা বাড়তে থাকে।
আরো
অস্থিরতা বাড়ে লতিফার। কী জবাব দেবো বাড়ি যেতে না পারলে। বন্ধের মধ্যেই
একটা গাড়ির জন্য দৌড়াতে থাকে,ঢাকার এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত।ঝড়ের মধ্যে
পাখির ঘরে ফেরার মত কষ্ট বাড়তে থাকে।
শেষবেলায় এসে লতিফার খালা বাড়ির দ্বারস্থ হয়।
যাহোক, রাতেই খালার সহযোগিতায় গাড়িতে রওনা হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে, অনেক বাঁধাবিপত্তি কাটিয়ে ভেড়ামারায় এসে পৌঁছায়।
মাঠের রাস্তা পার হয়ে আসতে আসতে সকাল দশটা পার হয়ে যায়। গাড়ি এসে থামে
বাড়ির বারান্দায়। ওরা গাড়ি থেকে নামতে নামতে দেখতে পায়, কবরস্থান থেকে
বেশকিছু লোক টুপি মাথায় দিয়ে 'আল্লাহ-আল্লাহ' উচ্চারণ করতে করতে বাড়ির দিকে
ফিরছে। মমতাকে তার বুকে জড়িয়ে রাখতে চেষ্টা করে লতিফা।
বাড়ির ভিতর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসতে থাকে।