[ঐতিহ্যবাহী আফগান লোক
কবিতা: লান্দি। মোট ২২ মাত্রা ও দু’লাইনের কবিতাগুলোর গঠন-বৈশিষ্ট্যের
মূলকথা হলো: প্রথম লাইনে ৯ মাত্রা এবং দ্বিতীয় লাইনে ১৩ মাত্রা থাকবে। লাইন
দু’টির শেষে, প্রান্ত্যমিল বাধ্যতামূলক নয়; বরং অমিলই প্রধান। তবে, মিল
রেখেও রচনা করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। লান্দি শব্দটি পশতু; এর আক্ষরিক অর্থ ছোট
আকারের বিষাক্ত সাপ। দু’লাইনের সংক্ষিপ্ত ও শক্তিশালী কবিতাগুলোকে এমন
নামকরণ করার পেছনে একধরণের কূটাভাস সৃজনের ভূমিকা থাকতে পারে। যা হোক, লান্দি’র
বিষয়বস্তু সাধারণত: যুদ্ধ, বিচ্ছেদ, দেশপ্রেম, বিষাদ এবং নর-নারীর
প্রেম।লান্দিকে চলমান কবিতা এবং বোরখাভেদি চিৎকারও বলা হয়। আফগান লান্দি
কবিতার রচনাকার হিসেবে উল্লেখযোগ্য দু’টি নাম: রাহিলা মুসকা এবং মালাইলা।
লান্দি আফগান যোদ্ধা এবং নারী-সমাজের মনোবল বৃদ্ধি করে আমৃত্যু লড়াইয়ে
উদ্বুদ্ধ করে।
লান্দি সাধারণত আফগান নারীরা রচনা করে থাকেন এবং সেদেশের
নারী-সমাজ, কৃষক ও যাযাবরদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। কবিতাগুলো সুর করে গান
আকারে গাওয়া হয়ে থাকে।
১৭০০ সালের গোড়ার দিক থেকে লোকসাহিত্য হিসেবে
প্রচলিত এই লান্দি কবিতাই, সেদেশের মৌখিক-সাহিত্যের মধ্যে প্রধান।
নিরক্ষতার প্রাধান্যকেই এ ধরণের কবিতাকে মৌখিক সাহিত্য করে তুলেছে বলে মনে
করা হয়।]
.
* মালালাই [১৮৬১ - ২৭ জুলাই ১৮৮০]:
আফগান নারী
যোদ্ধা এবং লান্দি কবিতার প্রথম প্রাণ। তাঁকে মালালাম, মাইয়ান্দের মালালাই
এবং মালালাই আন্না নামেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন
আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশে মাইবান্দের নিকটবর্তী খিঘ নামক গ্রামে।
বৃটিশ সেন্যদের বিরুদ্ধে দু’বার প্রতিরোধ যুদ্ধ করেন তিনি। প্রথম যুদ্ধে
আফগানদের বিজয়ী করেন। দ্বিতীয় প্রতিরোধ যুদ্ধে বৃটিশ সেনাদের হাতে নিহত হন।
তাঁর নামে আফগানিস্তানে অনেক স্কুল, হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা
হয়েছে। তাঁর জীবনী ও বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের গল্প দেশটির পাঠ্যপুস্তকে স্থান
পেয়েছে। নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত মালালা ইউসুফজাই-এর নামকরণ তাঁর
নামেই। আফগান বিশিষ্ট নারী রাজনীতিক মালালাই জয়ার নামকরণও তাঁর নামে।
মাইয়ান্দে তাঁর সমাধিসৌধকে মাজারের মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে।
.
**মালালাই বিরচিত লান্দি:
১.
প্রেমিকের রক্তে উল্কি আঁকবো
লজ্জা দেবো বাগানের প্রতিটি গোলাপকে
২.
প্রেমিকগণ! যদি যুদ্ধে না যাও
খোদার কসম, লজ্জার প্রতীকে বাঁচবে তোমরা
৩.
প্রিয় প্রেমিকের একবিন্দু রক্তে
প্রতিরোধ গড়বো, রক্ষা করবো: আমার দেশকে
৪.
আত্মাহুতির পোশাকে আছি
আলিঙ্গন করো; নিষেধ কোরো না চুম্বনে
৫.
ওই চোখ দুটো চোখ নয়। মৌমাছি।
সেই হুল থেকে, বলো এখন, কী করে বাঁচি?