শামীম আহমদ'র ১৮টি কবিতা
শামীম আহমদ'র ১৮টি কবিতা

কবিঃ  শামীম আহমদ

অবিশ্বাসের যূপকাষ্টে বাঁধা জীবন 

আমার বিশ্বাস ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে
কৃষ্ণবর্ণ অবিশ্বাসের তলে,
এখানে শস্য নেই আদিগন্ত জুড়ে রয়েছে কেবলই
শস্যহীন আগাছা,এগুলোতে দানা নেই
যা আছে তা কেবলই তুষ মাত্র ;
আমি এগিয়ে যাচ্ছি,
পিছন ফিরে দেখি কেউ নেই সঙ্গে
আমার সঙ্গীগণ সকলই হয়েছে বলি,
অবিশ্বাসের যূপকাষ্ঠে বাঁধা কেবলই মাথাহীন ধড়,
এখন প্রতিকি জীবন তাদের!

এখানে ক্ষুধার্ত দুপুর পুড়ে হয়েছে খাক
সকালের সোনারোদ্দুর মাখিনি আমি
কয়লা খাদানের অতল তলে
বাঁচার তীব্র যন্ত্রনায়
কাটিয়েছি সময়,এখন বিমূর্ত সন্ধ্যায়
আমি কি তাহলে কালো রাস্তার পিঠ ভেঙে ভেঙে
এগিয়ে যাচ্ছি শ্মশানের দিকে ! না ,আমি
ঐ দিকে যাবোনা ,আমি তপস্যাকে পুঁজি করে
দুহাত উদ্ধত করে মহারাত্রির মহামায়া ছিন্ন করে
অন্ধকারের ললাটে এঁকে দেবো তমোহর তিলক ।

বাঙালীরা পলিমাটির সন্তান

আমরা বাঙালীরা পলিমাটির সন্তান ,
আমাদের কোমলমৃণালবাহুদুটি এক সময় কঠিন-
শক্ত শাবল হয়ে ওঠে
পাথরের কর্ষণে,পাথরের প্রচ্ছন্নে লিখি নাম
পাষাণের বুকে আঁকি পদচিহ্ন,
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া হয়ে ব্যাবিলনের
সুউচ্চ মিনারে,চায়নার শক্ত প্রাচীরে ;

যেখানে গিয়েছি সেখানেই পড়েছি পৃথিবীর কাব্যপুঁথি
তাঁর নিজস্ব নিয়মে নিজের ব্যাকরণ ;
পদ্মা ,মেঘনা ,সুরমার অববাহিকা ছাড়িয়ে
সুয়েজখাল ,হুয়াংহু, টেমসে্র নীল জলে ভাসিয়েছি
জীবনের ভেলা,
কেটে যায় বাল্যদুরাশার ক্ষণ
জ্বলে উঠে যৌবন ,জীবনের খা খা রুদ্দুরে
আমাদের শুদ্ধ হাততালিতে হয় অসুর দমন ;

আমরা পলিমাটির সন্তান
আমাদের দুহাতের মুটো ভর্তি আগুন ;
আমরা আগুন কুড়াই
আমরা হাড়ে শান দেই জীবনের ছুরি
ভেঙে গড়ি,আবার ভাঙি বাঁচার তাগিদে ,
মসলিন তাঁতের খটখট শব্দে
পৃথিবীর প্রান্তরে লিখি জরিন সুঁতায়
লাল সবুজের ইতিহাস,আমাদের স্বাধীনতার সনদ।

কবিগণ সময়ের সূর্যসন্তান 

শুনেছি কবিগণ নাকি স্বপ্নডিঙার মাঝি
সময়ের সূর্যসন্তান ,
কিন্তু আমিতো স্বপ্নডিঙার যাত্রিই হতে পারিনি
আমি কী লিখবো কবিতা।

কবি বর্তমানকে ধারণ করে আগামীর স্বপ্ন
আঁকেন লাল টুক্ টুক্ টিয়ার হলুদ ঠোঁটে,সাদা বকের
পালকে শুভ্রপদ্ম,তারার ফুল গুঁজে দেন প্রিয়ার
খোঁপায় ।

কবি নদীর জলে নিজেকে ভাসিয়ে দেন ঐ দূর
অজানায়,হারিয়ে যান মোহনায়;
নদীর ছলাৎ ছলাৎ টানে ,যেখানে হয়
নদী সঙ্গম,আবার জোয়ারের তাণ্ডবে নদীর
দুকূল ছাপিয়ে তা তা থৈ থৈ ছন্দে অসুন্দরের বুকে করেন
ধ্রুপদী নৃত্য ,কবি সময়ের সূর্যসন্তান
কবির কলম হর্ষধ্বনি করে গায় মানবতা জয়গান ।

কী লিখবো কবিতা আমি
আমিতো অমাবস্যার রাতের জন্মান্ধ পথিক ;
আমি দেখিনা বিকেল বেলার ঘুম পাওয়া রোদ ক্লান্ত হয়ে
রাতের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকে,
দুচোখ তার আকাশ ভরা স্বপ্ন আঁকে ;
আমি দেখিনা শীতের পাখি নীড়ে ফিরে
তার ক্লান্ত ঠোঁটে ভালবাসা উষ্ণ পরশ প্রিয়ার তরে;
আমি অনেক কিছুই দেখিনা ,
দেখিনা ,চারপাশের বঞ্চিত মানুষ তাঁদের মৌলিক
অধিকার হারিয়ে দিশাহারা দিকশূণ্য আজ!
এখন নিজেকে মনে হয় তাদেরই দলে ;

আমি নিজেই পথহারা চিনিনা তো পথ
রাতের আঁধারে আমার জন্মান্ধ রথ
আটকে থাকে চোখের কোনে অনন্তকাল ,
জীবন মৃত্যুর মধ্যে কেবল দুর্বোধ্য এক ধুম্রজাল ।

কবিগণ সময়ের সূর্যসন্তান
আজীবন লিখে যান মানুষের মুক্তির গান।

অকালে ঝরে পড়ে যৌবনকুসুম

রাতের শহর কাঁদে ফুটপাথে
যুবতীর নাভিমূলে কষ্টের দাগ,
এ কেমন রাজদন্ডনীতি অকালে ঝরে পড়ে যৌবনকুসুম ?
অবশেষে কেবলই থেকে যায় পৃথিবীর কঙ্কাল !

তপস্যার তাপে হাজার বছরের বুদ্ধিমত্তা শেষ পর্যন্ত
নিজেকেই পোড়ায় বিবেকের উনুনে ,
বৃক্ষমূলে বিষ ঢালে সময় ,
সুলক্ষণের অপেক্ষায় অগণিত পল্লব
ওরা হাত জোড় করে বসে আছে
আজন্মের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ।

এই বদ্বীপে নীতির ভিতরে নীতি
সম্ভবকে অসম্ভব করে তুলে,এ’কি তাহলে নিয়তি?

এতদূর হেঁটে এসেও যদি থেমে যায় পথ

বাতাসের বাঁশি শুনে
পাহাড়ের কান গুলোও যখন জেগে ওঠে
চোখের স্যাটার তুলে নেমে যায় অন্ধকার ,
সৌরনদীতে সূর্যের ডুব-সাঁতারে আলোর
বন্যায় প্লাবিত হয় মহাবিশ্ব
আমরা তখনও জন্মান্ধের কাছে
হস্তরেখা দেখাতে ব্যস্ত ,কী তাজ্জব ব্যাপার !
হ্যামিলনের বাঁশির সুরে আনমনে ছুটে চলি
অন্ধকার নগরের চৌকাট পেরিয়ে আরো অন্ধকারে
যেখানে ইয়াজুয মাজুয জন্ম জন্মান্তরের কয়েদি ।

আমি স্বপ্ন আঁকি দু’চোখে 

তোমার আঁচলে ভেসে যাচ্ছে নদী
পদ্মা মেঘনা যমুনা সুরমা আরো কতো-কী
ওরা জীবনের গান গায়
ওরা মানুষের গান গায়
ওরা কান্না শোনে ,আর্তনাদ শোনে
তবুও নীরবে বয়ে যায় ;

তোমার আঁচলে বহতা নদী
তোমার দু’চোখে যে অবারিত স্বপ্ন
সে স্বপ্ন দেখে সতেরো কোটি মানুষও
রাতের নিস্তব্ধতায়,চোখের পাতায় ,ওরা স্বপ্ন আঁকে
ক্ষুধার্তের চোখে একটু ডালভাত
শীতার্তের গরম আচ্ছাদন
বস্তিবাসীর একটি টিনের ঘর,যা হবে একান্তই নিজের,
ভাড়ায় খাটা রিক্সা চালকের একখানা নিজের রিক্সা অতঃপর
পাতিনেতা বড়ো নেতা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর
এমপি মন্ত্রী হবেন,মন্ত্রীর চোখে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন !
ছোট কবি বড় কবি হতে
বড় কবি শ্রেষ্ঠ জাতীয় পুরুষ্কার পেতে ,
আমি স্বপ্ন আঁকি আমার দু’চোখের পাতায়
তোমার আঁচলের নিচে বয়ে যাওয়া নদীতীরে
সবুজের শ্যামলিমায় একখানা ছোট্ট নিরাপদ ছাউনি ,
সেই ছাউনির নিচে সতেরো কোটি মানুষের স্বপ্নের সুখের নিবাস ,
তোমার আঁচলের নিচে ছন্দে চলে নদী
সেই নদীপাড়ে অসংখ্য স্বপ্নিল চোখ
অথচ তুমি রক্ত গঙা পেরিয়ে শ্মশানের দিকে এগোচ্ছ!

জন্মান্ধ জঠরে অপেক্ষমাণ চোখ 

আধাঁরের ঝুলিতে বিষ,
সজল ঠুংরী গেয়ে চলে পথিক,
পঞ্চমুখী পুণ্যতায় আবেগ জড়িয়ে
একটি চন্দ্রিমা খচিত রাতের অভিপ্রায় তাঁর
একটি স্বর্ণালী সকালেরও ,
নিকষ কলো ঢল নেমে গেলে বেঁচে যায় মানুষ
এখনো জন্মান্ধ জঠরে অসংখ্য চোখ অপেক্ষায়
অপেক্ষমাণ ,যদি দখিনা বাতাসে পূর্বরাগ বেজে
উঠে কোন ঋদ্ধিমান তপস্যির তপোবন থেকে ।

অনশ্বর আকাশে কে ঘোমটা দেয় বলো দেখি
স্রোতশ্বিনীর পায়ে আবার গোলামীর জিঞ্জির,এ-কী ?
এ নয় কোন বানবাসী কামনা পথিকের ,
ইরাবতির কলতানে বেজে উঠুক আবার শতকন্ঠের কলতান
মানুষের জয় হবে নিশ্চয ।

স্মৃতি কাতর মানুষ 

সমুদ্রের ঢেউ গুলোও বিজয়ের উল্লাসে
বারবার এসে করে ভীড় সৈকতে ,
আবার ফিরে যায় মহা সমুদ্রের
সুখ-দুঃখের স্মৃতির রোমাঞ্চিত ব্যথায় ,
কিংকর্তব্যবিমূঢ়তায়,আমিও দাঁড়িয়ে থাকি
সমুদ্রের বেলাভূমিতে চেনা সুখের পরশ নিয়ে ।

আমরা মানুষ বড়ই স্মৃতি কাতর
তাই স্মৃতির খাতায় খুঁজি -
শুকিয়ে যাওয়া গোলাপের পাঁপড়ির মতো
খুব চেনা প্রিয়জনের চুলের ঘ্রাণ
৭১এর আগুনঝরা দিনে ফিরে যাই বারবার
পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ডাকি প্রিয় নাম
পাহাড় প্রতিধ্বনি করে উত্তর দেয় কিন্তু প্রিয়জন
ফিরে আসেনা আর ,মহাশূণ্যে ঘুরপাক খায়
তাঁদের নামের বর্ণমালা ,
যা কেবলই স্মৃতির ভাঁজে জমে থাকা
ধোঁয়াশা প্রতিচ্ছবি মাত্র
তবুও আমি স্মৃতির আলপথ দিয়ে হাঁটি
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত
প্রত্যেকটি বদ্ধভুমিতে দাঁড়িয়ে স্বরণ করি
বিনম্র শ্রদ্ধায় বাংলা মায়ের সূর্যসন্তানদের ।

মাটির বাউল 

মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ইন্দ্রিয়গুলো ধীরে ধীরে বিকল হতে থাকে,এক সময় মানুষ বিকলাঙ্গ হয়ে যায়,
যদিও আপাতদৃষ্টিতে স্বাস্থবান দেখায় ।
বুদ্ধিমত্তা লোপ পায় বিবেকের ভাটা পড়ে ,
এ মনে হয় বয়সের লেবেলটা খুব কাছের মানুষরাই লাগায় !
আপনজন দূরে-বহুদূরে চলে যায়
মমতার বন্ধন ছিন্ন করে !
যে-যার মতো করে এগিয়ে যায় বার্ধক্যে ।
খুব ভাগ্যবান হলে পরিজনের তিরস্কার ,
পুরানো আসবাবপত্রের মতো জমে
ধুলির প্রলেপ চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে ,
আর বিত্তবান হলে বৃদ্ধাশ্রমেই শেষ আশ্রয় !!

রাতের জিহ্বা বেয়ে নেমে আসা
অসংখ্য ছারপোকার রক্ত শোষণ,
নিদ্রাহীন রজনীর-
সমস্ত কলেবর জুড়ে শুধুই থেকে যায় একটি
দীর্ঘ নিঃশ্বাস পথিকের,
বিন্দু থেকে বৃত্ত ঘুরার কষ্ট কেউ কেউ সহ্য করে
আর কেউ মধ্য পথেই মাটির বাউল মাটিতে মিশে
জীবনের মুখে কালো পর্দা টেনে -——

মুক্তির মিছিলে যখন কবি 

বুকের মধ্যে পোষা ব্যথা চোখের কোনে বিষন্নতা
তবুও কবির হৃদয় নিঃশব্দে বাজে বৃষ্টির জলসায় ।

আবার-
বজ্রের হুংকারে চলে পলকে ক্লান্তি ভুলে
মরুরাত্রির বুকে আগুন ঢেলে,কবি উন্মাদ ;

নদীর শিয়রে বসে ভেসে যায় মোহনায়
আঁজলা ভরে তুলে আনে জল উল্লাসে এক সাগর,
তারপর, স্বপ্নের বাগডোর ছিড়ে,
দধীচির হাঁড়ে, লিখে নাম,জলের ফোঁটায়-
কখনো সূর্যসেন কখনো ক্ষুদিরাম ,
কখনো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বাঙালীর মুক্তির জয়গান ।
জয় বাংলা .......

জীবনের সাথে মোলাকাত 

প্রতিদিন অন্ধকারের ঘুম ভেঙে
যখন জীবনের সাথে
হয় মোলাকাত লোকালয়ে,
কখনো আশ্চর্য হই কখনো আপ্লুত
সুন্দরের সর্বনাশে আমি কম্পিত, প্রকম্পিত ।

কিছু কিছু মানুষের চরিত্র দেখে গিরগিটিও আত্মহত্যা করে
চকিত চেতনায় কিছু বলতে চাই কিছু লিখতে চাই
কিন্তু শব্দের ঘ্রাণ কেউ নিতে চায়’না,
কেনো নেবে ? শ্রোতাদের সামনে’যে চটকদার ভাষণ নেতাদের!
উনাদের বক্তৃতায় সুঘ্রান আসে কী না জানিনা
তবে আমি দুর্গন্ধ পাই,পাই মিথ্যের উপাখ্যান !
যাঁর ভাষণ শোনলে এখনো সিক্ত হয় বুকের জমিন
যিনি সত্য বলতেন যাঁর বক্তৃতায় উঠে আসতো
কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের কথা,
তাঁকে-তো ১৫ই আগষ্টে মৃত্যুর মোহনায় পৌছে
দিয়েছে কুলাঙারের দল
এখন সবই রক্তাক্ত দলিল ;

আমার অক্ষরের মুক্তা গুলো
ময়লা কাগজের স্তুপে প্রহর গূনে
আর একটি নতুন পান্ডুলিপিতে সংযোগ স্থাপনের জন্যে ;
যদি কখনো চাঁদের বুকে পদ্মার ঢেউ জাগে
মোহনায় মিশে জোছনার তরঙ্গে তরঙ্গে আমার অক্ষর গুলো....

অন্ধ কবি 

চোখে সুরমা মাথায় তকন্নূর ঝুলিয়ে
নিজেক শুদ্ধ করি লোকালয়ে
অথচ কালো রাস্তার বোতাম খুলে
রাতের আঁধারে খুঁজি সফেদ উরুসন্ধি!
সেদিন ক্যাফেবারে নিলামে উঠলো দৃষ্টি বড় সস্তায়,
তারপর এক ক্রেতা এক দুই তিন বলে
কিনে নিলো দৃষ্টিসত্তা আমি নিঃস্ব হলাম
সব কিছু হারিয়ে এখন কৃতদাস;
ধৃতপঞ্চইন্দ্রিয়ের কারাগারে বন্দি আমি
পুরাটাই অন্ধ এখন,আধাঁর কিনি আবার আধাঁরও
বিক্রি করি হররোজ,মুক্তি কী হবে এই অন্ধ কবির?

আমি মুক্তি চাই
মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে চাই
আমি একটি কবিতা লিখতে চাই ,
যদি হাতের তালুতে লোম গাজায়
যদি লোমগুলো বৃক্ষের মতো বেড়ে ওঠে
সবুজের সামীয়ানায় ঢেকে দেয় তপ্ত দুপুর
তবেই একটি কবিতা লিখতাম পল্লবে পল্লবে !

কবিতা আসলেই কী

কবিতা কী ?
সে কি প্রেমিকা না-কি বধু
সে আমার আত্মার আত্নীয় কী শুধু
হয়তো কিছুই না ;
তবু করি তার সাথে অষ্টপ্রহর বসবাস,নিঃশর্ত সমর্পণ
হৃদয়ের গহিনে থাকে মনের অলিন্দে করে পায়চারি
আহামরি,কী অপরূপ রূপ তার
তৃতীয় নয়নে দেখি নিগুড় বিমুগ্ধতায়,
সে কি আমার একান্তই আমার
যে চোখের মনিতে উড়ায় স্বপ্নের ফানুস
কবি বেহুস ,সাথে কবিতাও মদহুস ।

যেমন ডিমের কুসুমের নিচে সূর্যের হাসি
লুকিয়ে থাকা সন্ধ্যা দুপুর ,
সে আমার সকালের সোনা রুদ্দুর ।

কবিতা সে কি আমার একান্তই আমার ?

জীবনের সমীকরণ


নদী বাস্প হয়ে ওড়ে ঐ দূর আকাশে
নীল সমুদ্র দেখি নীল অম্বরে মিশে ।

প্রকৃতির হিসাব বড়ই সুন্দর, কিন্তু জীবনের ?
জীবন যেনো এক কঠিন অংকের অসমাপ্ত ভগ্নাংশ !
কিছুতেই মিলেনা কেবলই বাড়ে ক্লান্তি,
রাতের ক্লান্তি যখন এককাপ রঙ চা’য়ে জুড়াতে গেলাম
ঠিক তখনই -
দীর্ঘশ্বাসে চা’য়ের কাপে ওঠে ঝড় ,তুমুল জলোচ্ছ্বাস
সুখের পরিন্দারা প্রাণপনে ছুটে অভয়-আশ্রমের খোঁজে
অভয়-আশ্রম এখানে কোথায় ?
হাত কাঁপতে থাকে শরীর নেতিয়ে পড়ে চটচটে টেবিলে
চোখের পাতায় এখনো রাত্রি ঘুমায় আধ-মরা ঘুমে !
ঘুমোঘোরে চলে জীবনের হিসাব ,কিন্তু মেলেনা গোজামিলেও না
এ বড়ই কঠিন সমিকরণ জীবনের ,
কারো দুইয়ে তিনে পাঁচ হয়
কারো আবার দুইয়ে তিনে ছয় !
আমার শূন্য থেকে শূন্যেই ক্ষয় ।

আমি ঘুমোতে চাইনা আর
এবার প্রকট হোক তীব্র তমোহর ,
এভাবে আর কতো বেহিসেবি জীবন ।

শব্দকৃষক

আমি একজন কৃষক, শব্দকৃষক;
অক্ষরের চাষ করে শব্দের ফসলের অপেক্ষায় থাকি বারোমাস ,
হৃদয় নিঃশব্দে বাজে নিউরনের বিতানে জড়ো হয় শব্দকোষ ,
নিস্তব্ধ শহরে রাতের অন্ধকার ভেঙে যখন শব্দরা কেঁদে ওঠে,আমি দুচোখ বন্ধ করে বীজ বুনি বুকের জমিনে আবার যখন ওরা হাসে আমি কলমের নিবের নেকাব খুলে দেই ওরা মুক্ত বিহঙ্গের মতো বেরিয়ে পড়ে বিজয়ের উল্লাসে।কখনো চাঁদের নাকফুলে ওরা জোছনার মুক্তা কুড়ায়,আবার কখনো সূর্যের ললাটের ঘামে দিব্বি সাঁতার কাটে ,আমি দেখি আর হেসে মরি চোখ বোঝে নিজে নিজেই রোমাঞ্চিত হই বারংবার !
সফল কিংবা নিঃস্ফল নবান্নই বলে দেবে
যদি সেই তিথিটুকুন পর্যন্ত বেঁচে থাকি
যদি কোনদিন নবান্নের দেখা পাই ।

মেঘের ব্যারিকেড ভেঙে সূর্য উঠুক

অনেক কিছুই অন্তরালে থেকে যায়
যেমন ফুটন্ত জল বাস্পের সাথে মিশে
দৃশ্যমান হয় না কখনো,
কেউ কেউ কিছু সময়কাল
তারপর হয় সম্মুখে প্রকট
যেমন পূর্ণিমার তিথিতে চান্দের আলো
গ্রহণের গহ্বরে ,আধাঁরের নেকাব পরে গ্রহণকাল পর্যন্ত ।

আমিও না-হয় এমনিভাবে কাটিয়ে দেই সময়,
তোমােদের নাগরিক কোলাহলে না’ইবা গেলাম আজ;
জলের টেবিলে ছেড়া পান্ডুলিপি রেখে জীবনের,
কিছুকাল বেড়িয়ে আসি দৃষ্টির সীমানা ভেঙে
পারাবতের স্বপ্নিল ডানায় চড়ে দিগন্তের ওপার থেকে।

গ্রহণের কাল কেটে যাক,
মেঘের ব্যারিকেড ভেঙে সূর্য উঠুক
রাজপথ ভরে যাক রঙিন ফ্যাষ্টুনে
আর আলকাতরা নয় মানুষের মুখে শোভা পাক ফুল চন্দনে ,
তারপর না’হয় মিশে যাবো তোমাদের সাথে প্রাণের মিছিলে
আজটা এভাবেই থাকুক,নিভৃতে কাটিয়ে দেই সময় ।

জোনাকির লন্ঠন ভাঙে পেঁচার দৃষ্টি

নেশায় ঢলো-ঢলো রাত্রির চোখ
জোনাকির লন্ঠন ভেঙে চুরমার পেঁচার তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে
ক্ষুদ্র আলোকপোঁকার চিৎকারে ফেরারী বাতাস
কেঁপে কেঁপে ওঠে বৃক্ষের পাতাঝরা ডালে ;
প্রকৃতির কান্না শোনে বেরিয়ে পড়ি কবিতার ছায়াপথ ধরে,
হাঁটছিতো হাঁটছি ডানবাম ভুলে গিয়ে -
আমার গানের প্রতিচ্ছায়া দেখে দেখে রাতের শরীর জুড়ে;
কিন্তু সুর,কোথায় যে হারিয়ে ফেলেছি অজানায়
আলেয়ারে আলো ভেবে এ আমি চলেছি কোথায় !
শীতের তীব্রতায় ,ওম খুঁজি চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ।

জোনাকির রুদ্ধশ্বাস আবারও-
ভিজিয়ে দিলো বুকের পাটাতন
অসময়ে সম্মুখে এসে দাঁড়ায় যখন অশুভ-ক্ষণ।

শুদ্ধতার বিচারে কবি

শুদ্ধতার বিচারে অশুদ্ধতা বৈধতা পেয়ে যায় যখন
তখন আমি নপুংসক নগরের গলিতে বসে আনমনে বগলি বাজাই!

সূর্যের হলুদ পিরামিড ভেঙে ভেঙে মৃত্ত্বিকায় মিশে যেতে দেখে
সুহৃদ অগ্রজ চোখের সামনে টাঙিয়ে দেন জীবন্ত প্রজ্যাক্টর,
সেই প্রজ্যাক্টরের ফিতায় ভেসে ওঠে -
দুইশত সত্তরটি কঙ্কাল গ্রন্থি তার নাভিমূলে চলছে
জোয়ার-ভাটা; জোয়ার ভাটায় সাঁতার কেটে কেটে
হাঙ্গর গর্ভবতী হয়ে প্রসব করে চলেছে অশ্বডিম্ব দেখলাম!
সেই অলিক ডিমের খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসছে
কেউটে, বিবর্তনবাদ যদিও মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়
তবুও মানুষ হতে পারবে কী না কে জানে ।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান