শামীম আহমদ এর কবিতাগুচ্ছ
ফাগুনের চিৎকার
ভাঙা পাথরের পথে এখনও হামাগুড়ি দেয় -
বাংলা বর্ণমালাগুলো
বুকের গভীরে কে যেনো জ্বালিয়েছে হোম
নিঃশ্বাসে বিষ ঢালে দুরন্ত সময় ,
দাঁড়াতে পারেনা আর ,পাথরের ধারালো নখের
আচড়ে রক্তাক্ত হয়ে মৃতপ্রায়
একটি আটই ফাল্গুনের অধীর অপেক্ষায় ।
বেনিয়া বুদ্ধিজীবীদের ঠোঁট থেকে হায়নার মতো
টুক্ করে লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসে
ভিনদেশি শব্দের আগ্রাসন
ফেব্রুয়ারি গিলে খায় আটই ফাল্গুনের ভুবনরাঙা
শিমুলের হাসি ,
ফাগুনের চিৎকারে আগুন লাগে বাসন্তী বনে
আর পুড়ে পুড়ে ভস্ম হয় ভাষাশহিদের অমলিন স্বপ্নগলো ।
বিস্তৃর্ণ আনন্দলোকে আগুন
প্রান্ত থেকে প্রত্যন্তে -
উতলা পৃথিবীর বুকে কেবলই অন্ধকার ঝরে
অগ্রিম অন্ধকারে গিলে খায় রেনেসাঁর মশাল ।
কালো রাত অন্ধকারে আরো কালো আজ
দুর্যোগ ঘনঘটা, অবাধ্য সাপের মতো সময়ের গতি,
দুধারি খঞ্জর কেটে দেয় হাজার বছরের সঞ্চিত বোধ ,
এ যেনো সুঁতাকাটা ঘুড়ির মতো হৃদয়ে ওঠে থরথর কম্পন ।
যখন দেখি ইতিহাস আহত ঘোড়ায় চড়ে রণে ভঙ্গ দেয়
আমার স্বপ্নিল ক্যানভাসে হয় মহাজাগতিক বিস্ফোরণ
নিমিষেই বিস্তৃর্ণ আনন্দলোকে জ্বলে ওঠে আগুন ;
বিদগ্ধ হয় নীলাকাশ ,সমুদ্রের মীন পুড়ে গরল অগ্নি লাভায় !
হৃদয়ের বৃন্ত ছিড়ে যায় ,হৃদয়ের বৃন্ত ছিড়ে যায়
হায় ,হায়...
করোনাকাল
নগরের বিক্ষিপ্ত আর্তনাদ শুনে
দিনের আলোতে যে স্বপ্ন এঁকে রাখি
রাত এলেই বিষধর সাপের মতো স্বপ্নগুলো
ফণা তুলে তেড়ে আসে ।
এম্বোল্যান্সের সাইরেনে
হু হু করে কেঁপে ওঠে হৃৎপিণ্ড ,
জীবন সমান্তরাল নয় ,পাহাড়ি পথের মতো-
উঁচুনিচুর সংমিশ্রণে দিকভ্রান্ত হয় যখন ,
তখন আমার কবিতাগুলো কাঁদতে কাঁদতে হেসে ওঠে
আবার হাসতে হাসতে রাতের নেকাবে মুখ ঢেকে
পরম মমতায় মৃত্যুকে ওম দেয়
বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ।