সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের  জন্মদিন

আজ সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৮৪তম জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের এইদিনে জন্ম নিয়ে ৮১ বছর বয়সে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়।

১৯৫৩ সালে ‘একদা এক রাজ্যে’ কাব্য দিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে তার যাত্রা শুরু হলেও ‘তাস’ নামের গ্রন্থটি আরও আগেই প্রকাশিত। দু’হাত ভরে লিখেছেন তিনি। তার রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরাণের গহীন ভেতর, নাভিমূলে ভস্মাধার, আমার শহর ঢাকা, বেজান শহরের জন্য কেরাম, বৃষ্টি ও জলের কবিতা.

ছয় দশক ধরে কবিতা, গান, নাটক, চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, গল্প-উপন্যাসসহ সাহিত্য ও শিল্পের ভুবনে অবিরাম বিচরণ করেছেন বহুমাত্রিক লেখক সৈয়দ শামসুল হক। সাহিত্যের সব শাখায় সাবলীল বিচরণের সক্ষমতাই সৈয়দ হককে দিয়েছে সব্যসাচী উপাধি।

কাব্যনাট্য রচনায় ঈর্ষণীয় সাফল্য পাওয়া সৈয়দ হক ‘নুরলদীনের সারাজীবন’, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘গণনায়ক’, ‘ঈর্ষা’ ইত্যাদি নাটকে রেখেছেন মুন্সিয়ানার স্বাক্ষর। ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ ও ‘নুরলদীনের সারাজীবন’ বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে।

লিখেছেন পঞ্চাশটির বেশি উপন্যাস। এর মধ্যে ‘আয়না বিবির পালা’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’ ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘নীল দংশন’ ও ‘মৃগয়ার কালক্ষেপ’ অন্যতম। পাঠক আলোড়িত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা’ ও ‘পরানের গহীন ভিতর’। ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছেন সৈয়দ শামসুল হক।

ষাট, সত্তর ও আশির দশকে অনেক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের সঙ্গে চলচ্চিত্রের জন্য গানও লিখেছেন সৈয়দ শামসুল হক। ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘অনেক সাধের ময়না আমার’, ‘তোরা দেখ দেখ দেখরে চাহিয়া’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা’র মতো বহু গান যা মানুষের মুখে মুখে। তার নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস অবলম্বনে গেরিলা নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। গায়ক এন্ড্রু কিশোরের জন্য তিনি চারটি গান লিখে গেছেন। শেষ বিদায়ের আগে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-বসে চালিয়ে গেছেন লেখালেখি।

জানা গেছে, চিকিৎসাধীন ছয় মাসে তিনি প্রায় ২শ কবিতা, উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেটে’র পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ ও আটটি ছোটগল্প লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন সব্যসাচী এই লেখক।

সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণকারী সৈয়দ হক বেঁচেছিলেন ৮১ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে দু’হাত ভরে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও গান লিখে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ছিলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, মা হালিমা খাতুন গৃহিণী।

তার সেই সৃজনশীল পথচলা থেমে যায় ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনকে স্তব্দ করে দিয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে একই বছরে এপ্রিলে কবির শরীরে ধরা পড়ে মরণব্যাধি ফুসফুসের ক্যান্সার। দেশের প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ছুটে যান লন্ডনের রয়েল মার্সডেন হাসপাতালে। মাস চারেক চিকিৎসা চলে সেখানেই। লন্ডনের চিকিৎসকরাই আশা জাগিয়েছিলেন লেখক আর ছয় মাস বাঁচতে পারেন। কিন্তু সে আশাও পরিণত হয় নিরাশায়। লন্ডনের চিকিৎসকরাই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তেমন কিছুই করার নেই।

২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফেরেন। এরপর থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবির ইচ্ছামাফিক তার জন্মভূমি কুড়িগ্রামের সরকারি কলেজের পাশে শায়িত করা হয় তাকে।

সৈয়দ শামসুল হকের কলম থেমে গেছে, কিন্তু তার লেখনী ভবিষ্যৎ লেখক, কবি ও নাট্যকারদের অনুপ্রাণিত করবে, পথ দেখাবে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।

এদিকে সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন উপলক্ষে কুড়িগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ জেলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান