সাক্ষাৎকার: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
সাক্ষাৎকার: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
‘মাটি থেকে ইট হয়, ইট থেকে বাসা—বাসা পুরাতন হয়ে ভেঙে যায়।’ পার্থিব উপন্যাসে লিখেছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এই বাংলা থেকে বাসাবাড়ি গুটিয়ে একদিন শীর্ষেন্দুদের পরিবার চলে গিয়েছিল কলকাতায়। তারপর সেখানেই তাঁর লেখক হয়ে ওঠা। সম্প্রতি লিট ফেস্ট উপলক্ষে ঢাকায় এসেছিলেন কলকাতার এই জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক। ১০ নভেম্বর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে প্রথম আলোর সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপে তিনি উন্মোচন করেছেন লেখকজীবনের নানা অধ্যায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিবব্রত বর্মন ও আলতাফ শাহনেওয়াজ


শিবব্রত বর্মন: আপনি মানবজমিন, দুরবিন, যাও পাখি, পার্থিব—এমন পাঠকনন্দিত উপন্যাসের লেখক। ইদানীং শবর দাশগুপ্তের লেখক হিসেবে বেশি পরিচিতি পাচ্ছেন। কোনো একসময় রহস্য সাহিত্যের লেখক হিসেবে পরিচিতি বেশি বড় হয়ে উঠতে পারে—এমনটি কি মনে হয় আপনার?

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়: না, সেটা মনে হয় না। তবে শবর লিখে আমি আনন্দও পাই। কারণ আমি নিজে গোয়েন্দা কাহিনির খুব ভক্ত। গোয়েন্দা কাহিনি আমি অনেক পড়েছি।

শিবব্রত: কাদের লেখা ভালো লেগেছে?

শীর্ষেন্দু: অনেক। সব লেখকের নাম হয়তো তোমরা জানবে না, আগাথা ক্রিস্টি তো আছেনই, শার্লক হোমস, মানে আমাদের আর্থার কোনান ডয়েল আছেন। তাছাড়া চেস্টারটন, তারপরে এলেরি কুইন, জর্জ সিমেনোও খুব ভালো লাগে। ফিলোসফিক্যাল লেখা।

শিবব্রত: রেইমন্ড চ্যান্ডলার?

শীর্ষেন্দু: হ্যাঁ, চ্যান্ডলারের বই কিনেছি। আমেরিকানদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লেখক বলতে পারি চ্যান্ডলারকে। তাঁর গোয়েন্দা নাম হচ্ছে ফিলিপ মারলো। আমার খুবই প্রিয়।

শিবব্রত: শবরের জনপ্রিয়তা আপনার মধ্যে এখন কোনো অস্বস্তি তৈরি করে কি না?

শীর্ষেন্দু: শবর তো জনপ্রিয় ছিল না। শুরুতে শবরকে নিয়ে একে একে পাঁচটা উপন্যাস লিখেছি।

শিবব্রত: ঋণ দিয়ে শুরু?

শীর্ষেন্দু: হ্যাঁ। তারপর সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে। কথা হলো, যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন শবর খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি। পরবর্তীকালে যখন সিনেমা হলো, তারপর খুবই জনপ্রিয় হয়ে গেল। আসলে সিনেমার হাত ধরে জনপ্রিয় হোক—এমন ইচ্ছে আমার ছিল না। সেটাই হলো বলে আমার দুঃখও আছে। যা হোক, শবর দাশগুপ্ত আমি ভবিষ্যতেও লিখব। কিন্তু আমার মনে হয় না যে শবরের জন্য মানুষ আমাকে মনে রাখবে। যদি রাখে তো অন্য কিছুর জন্য রাখবে, শবর দাশগুপ্তের জন্য নয়।

আলতাফ শাহনেওয়াজ: উজান আপনার অসাধারণ এক শৈশবস্মৃতি। সেই মারফত জানা যাচ্ছে, আপনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহে। সনদপত্রে আপনার নাম তো মধুসূদন মুখোপাধ্যায়। লেখালেখির জন্য শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় নামটি নিলেন কেন?

শীর্ষেন্দু: আমার নাম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ওখানে যে মধুসূদন লেখা রয়েছে, ওটা আমার দেওয়া নাম...

শিবব্রত: কোষ্ঠী?

শীর্ষেন্দু: না, আমার দেওয়া নাম। ওটার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কে নেই। আমার নাম মধুসূদন নয়, মধুসূদন উজান–এর নায়কের নাম, যেখানে আমার ছায়া আছে। আর উজান কিন্তু আমার আত্মজীবনী নয়।

আলতাফ: এটা উপন্যাস, ফিকশন!

শীর্ষেন্দু: নিশ্চয় ফিকশন। সবটা আমার শৈশব না। তবে ওই বইয়ের মধ্যে আমার অনেকটাই আছে। আমার শৈশব, কৈশোর...। সাতচল্লিশের শেষে ময়মনসিংহ থেকে যখন চলে যাই, তখন আমার বয়স হয়েছে এগারো বা সাড়ে এগারো বছর।

আলতাফ: উজান-এ সেই সময়ের ময়মনসিংহকে দারুণভাবে পাওয়া যায়। রেললাইন, ব্রহ্মপুত্র, শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ—সব যেন চোখে দেখা যায়। এত আগের স্মৃতি কীভাবে এত তরতাজা থাকে?

শীর্ষেন্দু: বাল্যকালের স্মৃতি একটু তরতাজাই থাকে। কেননা ভালো সময়ের স্মৃতি মানুষ ধরে রাখে। আর সব মানুষেরই শৈশবস্মৃতি একটু বেশি মনে থাকে। হয়তো পরের অনেক স্মৃতি চলে যায়, কিন্তু ওটা থাকে। কাঁচা মনের ওপর ছাপ গভীর হয় বলে স্মৃতিতে থেকে যায়।

শিবব্রত: বড় বড় সাহিত্যিকেরা আত্মজীবনী লেখেন, লেখার একটা বাসনা তাঁদের থাকে। আপনার নেই?

শীর্ষেন্দু: আত্মজীবনী লেখার বরাত অনেক দিন দেওয়া আছে আমাকে। আমার ছেলেমেয়েও বলছে আত্মজীবনী লেখার কথা। কিন্তু আমি এখনো সাহস পাচ্ছি না, সময়ও করতে পাচ্ছি না। দ্বিতীয়ত, তোমরা যদি আমার নয় খণ্ডের উপন্যাসসমগ্র দেখো, সেখানে নয়টা ভূমিকা আছে, ওই ভূমিকার মধ্যে অনেকটা আমার আত্মকথা আছে; আত্মজীবনী হয়তো পুরোপুরি নেই, কিন্তু আত্মকথা আছে।

শিবব্রত: আপনি কি ওটিকে যথেষ্ট মনে করেন?

শীর্ষেন্দু: না। এঁটে–বেঁধে একটা আত্মজীবনী লেখা হয়তো উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি, কবে হবে তা-ও বলতে পারি না।

শিবব্রত: আপনার লেখা পড়ে অনেকের এমন ধারণা তৈরি হয়, ব্যক্তি শীর্ষেন্দু আর লেখক শীর্ষেন্দু দুটো আলাদা লোক। আপনার লেখা আর জীবনযাপন যেন আলাদা। কী বলবেন?

শীর্ষেন্দু: আমার পক্ষে এটা ব্যাখ্যা করা মুশকিল। কেননা আমার ব্যক্তিজীবন আর লেখকজীবনকে আমি আলাদা করে দেখি না। ব্যক্তিগত জীবনযাপনের বিচ্ছুরণ হলো আমার লেখা। আমার বিশ্বাস-টিশ্বাসগুলো চলে আসে সেখানে। তবে এটা ঠিক, মানুষ নানাভাবে ব্যাখ্যা করে। নিজের মতো করে ধরে নেয় যে লোকটা এ রকম বা সে রকম বা লোকটা বিশ্বাসী। আমি কেমন ধরনের বিশ্বাসী, তা–ও হয়তো লোকে জানে না। কারণ আমাকে তো ব্যক্তিগতভাবে খুব বেশি লোক চেনে না। যারা চেনে তারা খানিকটা জানে। লেখকজীবনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিজীবন একাকার। দুটো আলাদা নয়। আমার বিশ্বাস থেকেই আমার লেখাগুলো উঠে আসে।

শিবব্রত: আপনার লেখায় ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের প্রভাবের কথা আমরা জানি।

শীর্ষেন্দু: আমার লেখায় ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের প্রভাব সবচেয়ে গভীর ও ব্যাপক। আমার জীবনযাপনের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে আছেন তিনি। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে ঠাকুর আমার জীবনের প্রধানতম উপকরণ।

শিবব্রত: আপনার লেখার মধ্যে তাঁর প্রভাব থাকে?

শীর্ষেন্দু: অবশ্যই। তবে সেটা প্রকটভাবে থাকে না। এমন নয় যে আমাকে একটা প্রচারকের ভূমিকা নিতে হবে। মানুষের নানারকম বিচ্যুতি-ব্যথা, দুঃখ-বেদনা, তার পাপ-পুণ্য, প্রেম-ভালোবাসা—ঠাকুর সবখানে জড়িয়ে আছেন। মানুষের কথা যখন বলছি, তখন ঠাকুরের কথাই বলা হচ্ছে।

শিবব্রত: প্রতিদিন কি নিয়ম করে লিখতে বসেন?

শীর্ষেন্দু: না, না, পাগল নাকি। ভীষণ অলস লোক আমি। লেখার অনুরোধ এলে তারপরই ভাবনা-চিন্তা শুরু করি; আরও অনেক পরে লিখতে শুরু করি এবং লেখা জমা দিই সবার শেষে। তাই আমাকে নিয়ে সম্পাদক ও প্রকাশকের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

শিবব্রত: আপনারা যে সময়ের কথা লিখতেন—গত শতকের সত্তর-আশির দশকে—সেই সময়ে কলকাতা শহরের চারপাশে নতুন শহরতলি তৈরি হচ্ছে, একটি প্রজন্ম গড়ে উঠছে। এখনকার যে প্রজন্ম, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পড়ে থাকে, আইনক্সে আড্ডা দেয়, তাদের কতটা তুলে আনতে পারেন নিজের লেখায়? এদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন?

শীর্ষেন্দু: নিশ্চয় পারি। আমার ছেলেমেয়েরা এদের সঙ্গে কানেক্টেড। আমি তো এই সময়ের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিশি, আমার বয়সী লোকদের সঙ্গে আমি মিশি না।

শিবব্রত: এই সময়ের ছেলেমেয়েদর ভাষা বুঝতে পারেন আপনি?

শীর্ষেন্দু: তাদের কথাই বেশি বুঝতে পারি, ওদের কথাই বোধগম্য মনে হয়। বুড়োদের কথা আমার কাছে বোধগম্য মনে হয় না।

আলতাফ: আপনাদের প্রজন্মের লেখকেরা দীর্ঘদিন শাসন করেছেন কলকাতার বাংলা সাহিত্য। আপনাদের পরেও নতুন কথাসাহিত্যিকেরা এসেছেন। অনেককে বলতে শুনি, সুনীল-শীর্ষেন্দু-সমরেশের পরে যাঁরা লিখছেন, তাঁদের লেখায় ওই জোর নেই।

শীর্ষেন্দু: আমাদের আমলেও লোকে বলত, তারাশঙ্কর-বিভূতির পর আর সে রকম হচ্ছে না। এখনো তেমনভাবে বলছে। আর আমরা সবাই তো একরকম লিখতাম না, নানারকম লিখতাম। কিন্তু এটা ঠিক যে এখনকার প্রজন্মে গদ্য লেখকের সংখ্যা কমে গেছে। এখন কয়েকজন লিখছে, ভালোই লিখছে।

আলতাফ: বাংলাদেশের কোন কোন লেখক আপনাকে আকর্ষণ করেন?

শীর্ষেন্দু: এখন তো তেমন পড়তে পারি না। শুধু বাংলাদেশ নয়, কারও লেখাই পড়ি না। বিদেশি অনেক বই—এই পামুক-টামুক—সব কেনা আছে, খানিকটা পড়েও রেখেছি, কিন্তু শেষ করার সময় পাচ্ছি না। আমার সময় এত কম। পাঠাভ্যাস সব চলে গেছে। তবে একসময় বাংলাদেশের হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে কিছুটা পড়েছি।

আলতাফ: ওপারের অনেককেই বলতে শুনি, ইংরেজি ও হিন্দির দাপটে কলকাতায় বাংলা ভাষা হুমকির মুখে। আপনার কী মনে হয়?

শীর্ষেন্দু: দ্যাখো, ভারত বিশাল দেশ। বাংলা ভাষা ভারতবর্ষের দ্বিতীয় ভাষা। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে শুধু ভারতবর্ষে যত বাঙালির বসবাস, ওখানে তাদের সংখ্যা দ্বিতীয়। অত বড় দেশে দ্বিতীয় ভাষা বাংলা। পৃথিবীতে সপ্তম। সোজা কথা! এত লোক যে ভাষায় কথা বলে, সেটা বিপন্ন হয়ে যাবে, এটা হয় নাকি? তা ছাড়া বাংলাদেশের কারণে, একুশে ফেব্রুয়ারির কারণে ইউনেস্কো বাংলা ভাষাকে এখন স্বীকৃতি দিয়েছে। আসলে বাংলা হচ্ছে বিশ্বের মিষ্টিতম ভাষা। এই মিষ্টিতম ভাষা মরবে না। কিছু বাঙালি তো ইংরেজিতে কথা বলবেই।

আলতাফ: ই-বুক তো চলেই এসেছে। ধরুন, এমন একটা সময় এল, যখন সবাই আপনার মানবজমিন কি পার্থিব আর বই আকারে না পড়ে পড়ছে ই-বুকে, কেমন লাগবে?

শীর্ষেন্দু: সভ্যতার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আস্তে আস্তে এইসব তো আসবেই, ই-বুক আসবে ভবিষ্যতে। এটা খারাপ না। কথা হলো, লোকে বই পড়লেই হলো, সেটা ইলেকট্রনিক ফর্মেই পড়ুক, আর কাগজেই পড়ুক।

আলতাফ: পার্থিব, দুরবিন, যাও পাখি—এই উপন্যাসগুলোর জনপ্রিয়তার কারণ কী?

শীর্ষেন্দু: এসব উপন্যাসের পাত্রপাত্রীদের আঁকতে গিয়ে আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হলো: মানুষের জীবন যেমন হয়, চরিত্রদের সেভাবেই উপস্থাপন করব; মানুষের জীবন যেমন হওয়া উচিত, সেভাবে উপস্থাপন করব না। আসলে আমি জানি না উপন্যাসগুলো কেন পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। আর এ উপন্যাসগুলোর বিষয়-আশয় নিয়ে অনেক কথা বলেছি, এখন আর বলতে ভালো লাগে না, মনেও থাকে না সবকিছু।

আলতাফ: সেই যে ঘুণপোকা থেকে শুরু, এরপর অসংখ্য উপন্যাস। নিজের লেখা কোন উপন্যাসটি আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়?

শীর্ষেন্দু: নিজের উপন্যাসের মূল্যায়ন একদমই করতে পারি না আমি। তবে উজান উপন্যাসে যেহেতু আমার শৈশবের কথা আছে, আমার দাদুর কথা আছে, সে জন্য ওটার প্রতি বেশ দুর্বলতা আছে আমার।

আলতাফ: উজান-এ কতটুকু আপনার শৈশবস্মৃতি আর কতটুকু ফিকশন?

শীর্ষেন্দু: অনেকটাই ফিকশন। ধরো বলব, সত্তর ভাগ ফিকশন।

জানা-অজানা শীর্ষেন্দু

* যৌবনে ভয়ানকভাবে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন শীর্ষেন্দু মুেখাপাধ্যায়, জীবনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন এবং একসময় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। শেষ পর্যন্ত মা–বাবা তাঁকে শ্রীশ্রী অনুকূলচন্দ্র ঠাকুরের কাছে নিয়ে যান। ঠাকুরের সান্নিধ্যে জীবন বদলে যায় তাঁর।

* তাঁর জীবনের প্রথম দুটি গল্প ফেরত এসেছিল দেশ পত্রিকার দপ্তর থেকে। তৃতীয়টি পাঠানোর পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যদি এটি ছাপা না হয়, তাহলে লেখালেখিই ছেড়ে দেবেন। ‘জলতরঙ্গ’ নামে সেই তৃতীয় গল্পটিই ছিল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ছাপা হওয়া প্রথম লেখা।

* প্রথম উপন্যাস ঘুণপোকা লিখেছিলেন সাগরময় ঘোষের তাগাদায়। ঘুণপোকার শ্যামল চরিত্রটি অনেকটা তাঁর নিজের আদলেই গড়া।

* শিশু-কিশোর জন্য কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল না শীর্ষেন্দুর। কিন্তু আনন্দমেলার তৎকালীন সম্পাদক ও কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অনুরোধে লেখেন প্রথম কিশোর গল্প। এমনকি নীরেন্দ্রনাথ অনেকটা জোর করেই তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নেন প্রথম কিশোর উপন্যাস মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি। এই উপন্যাসে ঠাকুরমার চরিত্রটি সরোজিনী দেবী নামে তাঁর এক বিধবা ঠাকুরমার আদলে গড়া।

* তাঁর তিন বিখ্যাত কিশোর উপন্যাস গোঁসাইবাগানের ভূত, ছায়াময় ও মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি নিয়ে বানানো হয়েছে তিনটি সিনেমা এবং তিনটিই বক্স অফিস মাৎ করেছে।

* শীর্ষেন্দুর প্রিয় উপন্যাস সতীনাথ ভাদুড়ির লেখা ঢোঁড়াই চরিত মানস। এ ছাড়া কমলকুমার মজুমদারের উপন্যাসও তাঁর প্রিয়। শরৎচন্দ্রের দেবদাসকে তিনি ‘অপরিণত হাতের সৃষ্টি’ বলে মনে করেন। কিন্তু এক শ বছর ধরে দেবদাস-এর সমান জনপ্রিয়তাও তাঁকে বিস্মিত করে।

* তাঁর সৃষ্ট বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র শবর দাশগুপ্ত। ‘শবর সিরিজ’–এর প্রথম বই ঋণ। শবর চরিত্র নিয়ে পরিচালক অরিন্দম শীল বানিয়েছেন এবার শবর, ঈগলের চোখ ও আসছে আবার শবর নামে একে একে তিনটি সিনেমা।

* বাংলাদেশি নাটকের ভক্ত শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, এ দেশের নাটকের গল্পগুলো খুব চমৎকার ও মিষ্টি। তিনি বলেন, ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখা যায় না বটে, কিন্তু কোনো না কোনোভাবে নাটকগুলো তাঁরা দেখেন।

* সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর শক্তি চট্টোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তবে তুই-তোকারির সম্পর্ক ছিল শুধু সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের সঙ্গে। মুস্তাফা সিরাজের অতিমাত্রায় ‘কর্নেল সিরিজ’-এ ঝুঁকে পড়াকে মানতে পারেননি শীর্ষেন্দু। এ জন্য সিরাজকে ভর্ৎসনাও করতেন। কারণ তিনি মনে করতেন,‘কর্নেল সিরিজ’ লেখা কমিয়ে দিলে সিরাজের কাছ থেকে অলীক মানুষ-এর মতো আরও ভালো ভালো লেখা পাওয়া যাবে।

সূত্র: বিভিন্ন সময়ের দেশ, আনন্দবাজার ও আনন্দমেলায় ছাপা হওয়া শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার এবং ঢাকা লিট ফেস্ট-এ ইমদাদুল হক মিলনের সঙ্গে তাঁর আড্ডা।

গ্রন্থনা: আবদুল গাফফার- সূত্র: প্রথম আলো ।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান