ছবি : নেট থেকে ।
আপনার আশেপাশে কিছু মানুষকে পাবেন যারা এমনিতে বেশ ক্রিয়েটিভ, তাদের মাথা থেকে নিত্য নতুন আইডিয়া বের হয়। যারা হয়ত খুব ভাল লিখে, কবিতা লিখে, গান করে, অদ্ভুত সুন্দর ছবি আঁকে অথবা এমন কোনো কাজ যা মানুষকে ভাবায়, মুগ্ধ করে। এই মানুষগুলোর সাথে যদি কিছুদিন মেশেন, তাহলে দেখবেন তাদের মধ্যে অনেক দ্বিধা কাজ করে, তারা অনেক কিছু নিয়ে খুব সেনসিটিভ, তাদের সাথে খুব বেশিক্ষণ কথা বলতে বলতে খেয়াল করবেন তারা হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে যায়।
এদের কেউ কেউ বন্ধু হিসেবে হয়ত ভাল, আড্ডা জমিয়ে রাখার গুণ কিংবা সুন্দর করে কথা বলার গুণ নিয়ে জন্মায়। কিন্তু সেটা কতক্ষণ? আপনি কখনোই দেখবেন না একজন ক্রিয়েটিভ মানুষ দিনের পর দিন একই মানুষকে হাসাচ্ছে, একই জায়গায় আড্ডা দিচ্ছে। বরং, কিছুদিন পর পর এদের ডুব দেয়ার অভ্যাস থাকে, জগত সংসার থেকে পালিয়ে নতুন কিছুতে সময় দেয়ার প্রবণতা থাকে। এদের ভালবাসার অনুভূতি খুব সুক্ষ্ণ, কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। এরা সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব সেনসিটিভ কিন্তু একই সাথে ভীষণ উদাসীনও থাকে।
কেন এমন হয়? এটার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ সম্ভবত আর্ট। যে আর্টিস্টিক কাজে তারা যুক্ত থাকেন সেটার পেছনেই তারা সবচেয়ে বেশি সময় দেন। একজন লেখক ভালবাসার সময়টাতেও খেয়াল করেন কীভাবে তার প্রেমিকা হাসে, কীভাবে সে অভিমান করে, কীভাবে সে চোখে কাজল দেয়- সব সুক্ষ্ণ ব্যাপারগুলো লেখক প্রতিনিয়ত খেয়াল করে৷ এই যে নিজেকে এবং নিজের চারপাশকে নতুন করে সবসময় আবিষ্কার করার প্রবণতা এটা যতদিন থাকে ততদিন এই মানুষগুলোকে দেখে আপনার সামাজিক মনে হবে, রোমান্টিক মনে হবে। তারপর একদিন খেয়াল করবেন এরা বাস্তব জগতে নেই। এই পর্যবেক্ষণগুলো দিয়ে তারা আর্ট তৈরি করেন। সেই আর্ট যতটা মুগ্ধতা জাগাবে, হয়ত ব্যক্তি মানুষ ততটাই বোরিং হতে পারে।
এজন্যে কোনো ক্রিয়েটিভ মানুষকে তার সৃষ্টির মতো করে চাইতে নেই। কোনো ক্রিয়েটিভ মানুষের কাজে মুগ্ধতা থাকুক, কিন্তু মানুষটার প্রতি দূর্বল হয়ে গেলেই হয়ত বাস্তবতার সাথে তফাতটুকু আপনাকে স্বস্তি দিবে না একটা সময়৷ যারা ইন্ট্রোভার্ট এবং একই সাথে ক্রিয়েটিভ তাদের নিয়ে আরো বেশি সমস্যা। এদের কাজ দেখে আপনি যা ধারণা করবেন, বাস্তবে এরা সেই কাজের মতো না। এরা অন্তরালে থেকে মানুষকে লক্ষ্য করবে, তাদের নিয়ে লিখবে, আর্ট তৈরি করবে কিন্তু মানুষের খুব কাছাকাছি গিয়ে সম্পর্ক রক্ষা করাতে এদের অনীহা। সেটা চাইলেও সাময়িকভাবে, দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্করক্ষার চুক্তি দিয়ে এদের আটক করা যায় না।
ক্রিয়েটিভ মানুষদের সাথে সম্পর্ক তৈরির আগে কয়েকটি সত্য আপনাকে মেনে নিতে হবে। কারণ আপনি যেভাবে মানুষকে বিচার করেন, ক্রিয়েটিভদের সেই একই পাল্লায় মাপতে গেলে শুধু হতাশই হতে হবে। অনলাইনে কারো ক্রিয়েটিভ কাজ দেখে পছন্দ করে তাকে হুটহাট ভালবাসা প্রস্তাব দেয়ার আগে এই সত্যগুলো ভেবে দেখবেন একবার।
১। তারা ভীষণ মুডি হয়। যদিও সবসময় সেটা প্রকাশ করবে না, লুকাবে; কিন্তু যদি একবার প্রকাশ করে তাদের এই মুড মেনে নেয়া আপনার পক্ষে বদহজমের কারণ হতে পারে। এই মানুষগুলোর মুড খুব ঘন ঘন বদলায়। এটাকে বুঝতে পারা খুব কঠিন ব্যাপার।
২। তাদের কাজ ইন্টারেস্টিং হলেও, তারা একই সাথে খুব ভয়ংকর রকমের বোরিংও হতে পারে। খুব ছোট ছোট ব্যাপারে এরা কৌতুহল দেখাবে, আপনার যা পছন্দ নাও হতে পারে। এমনকি একটা ঘাসের লতার দিকে তাকিয়ে এরা সারাদিন পার করে দিতে পারে।
৩। আপনি কখনোই এদের প্রথাগত পদ্ধতিতে সারপ্রাইজ দিতে পারবেন না। এদেরকে যতটা সহজ ভাবেন ততটা না। এদের মুগ্ধ হবার মেয়াদ খুব দ্রুতই পালটায়।
৪। তারা দেখতে খুব সাধারণ হতে পারে কিন্তু তাদের মাথায় সবসময় জটিলতা ঘুরে ফিরে। আপনি আশা করবেন তারা আপনাকে প্রায়োরিটি দিবে, কিন্তু আপনি কখনো তাদের আচরণে বুঝবেনও না তারা একসাথে কতগুলো জটিল বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে থাকে।
৫। যদি আপনার শুচিবায়ু থাকে, খুব নিয়মকানুন পছন্দ করেন, খুব গোছালো ব্যাপার-স্যাপার ভাল লাগে, তাহলে এদের হাত থেকে একশ হাত দূরে থাকুন। ক্রিয়েটিভরা বেশিরভাগ সময় খুব অগোছালো থাকে, তারা নিজের নিয়মে চলে। কারণ চিন্তা প্রক্রিয়াটাই তো আসলে অগোছালো আমাদের, ক্রিয়েটিভদেরও তো আরো বেশি। স্বাভাবিক জায়গার চেয়ে এলোমেলো জায়গায় এদের মাথা বেশি কাজ করে।
৬। ক্রিয়েটিভদের সঙ্গ মানুষ বেশি পছন্দ করে কারণ তারা খুব কথা শুনতে পারে, শ্রোতা হিসেবে তারা অসাধারণ। জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ সময় তারা চুপচাপ থেকে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু কথা শুনছে বলে ভাববেন না, আপনার সব কথাকে সে গুরুত্ব দিচ্ছে। আসলে এটাও তাদের চিন্তা প্রক্রিয়ার অংশ। একটা কথার সূত্র ধরে তারা চলে যায় অন্যভুবনে অন্যমনস্ক হয়ে।
৭। সবচেয়ে বড় কথা, একজন সৃজনশীল মানুষ যদি তার কাজের প্রতি সত্যিই ডেডিকেটেড থাকে, তাহলে আপনি কখনোই হাজার চেষ্টা করেও তার প্রথম প্রেম হতে পারবেন না, হিজ/হার ফার্স্ট লাভ উইল অলয়েজ বি দেয়ার আর্ট। তাই ক্রিয়েটিভদের প্রেমে পড়ার আগে এই ব্যাপারটা খুব বেশিরকমে মাথায় রাখবেন। কাজের জায়গার কারণে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া চাপিয়ে দিতে যাবেন না এদের উপর। কারণ, এরা কখনো কাজটাকে ছাড়বে না, হয়ত আপনাকেই..