ছবিতে : কবি সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়
হাওয়ার ভাষায়
আহত চিতার মত , আলোয় পিছলে যায় পার্ক স্ট্রিট
ম্যাগনোলিয়ার দরজা ঠেলে রাস্তায় বেরিয়ে আসে
নিরুদ্দেশ মোনিকা চৌহান , সিগারেট ধরায়...
কলকাতা নামে , কোনো শহর কি ছিল কখনো কোথাও ?
চিঠি আর টেলিফোন , ইমেল আর চলভাষ
কোথাও পৌঁছোয়না , আলোর বুদ্বুদে চোখে অন্ধকার নামে
ভালোবাসা, সেই কবে কোভালাম বিচে গিয়েছিল, আর ফিরে আসেনি কখনো
প্রিয় মুখ , জটিল মানচিত্র হয়ে গেলে , মনে হয়
বড় বেশি অপচয় হয়েছে সময়…
হাইরাইজ অনুবাদ করতে গিয়ে
যে ছেলেটি জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া অরণ্য হয়ে গেছে আজ
পাঁচ-দশ বছর পর , সে তোমার দরজায় বেল দেবে ঠিক একদিন
কথা হবে , হাওয়ার ভাষায় ...
এপিটাফ
জঙ্গলে গাছেদের কন্সার্টে
হাওয়ার গিটার হাতে বসে আছো তুমি
আর দেখছো - ভাঙ্গামুখ জুড়ে যাচ্ছে মেঘলা আকাশে
পরিত্যক্ত রেললাইন পেরিয়ে যে হেঁটে এলো -
সে তোমার হত্যাকারী, সে তোমার আজন্ম অসুখ
ছায়ার পৃথিবী এক, এক মায়ার পিনকোড
মাথার ওপরে আর মাথার ভেতর
হাত নেড়ে কাছে আসে , হাত নেড়ে এপিটাফে ফিরে চলে যায়....
স্ট্যাচুদের দেশে
চলে যাবার আগে, একবার ঘুরে তাকিয়েছিলে -
সে দৃষ্টি আজও মনে পড়ে
বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া রাস্তায়
পুরোনো ল্যাম্প-পোস্টের বিবর্ণ আলোর মধ্যে
সুরেলা দুঃখ হয়ে যাবার আগে
একবার তাকিয়েছিলে, মনে পড়ে
জুলাই মাসের হাওয়ায়
ভেঙে পড়া এক শহরে
দূরের জানলা থেকে দেখেছিলাম
সমুদ্রের ভেতর ঢুকে যাচ্ছ তুমি
জলোচ্ছাসে মুছে গিয়েছিল সমস্ত ই-মাইনর
চলে যেতে যেতে
নিজের চুল খুলে কালবৈশাখি এনেছিলে চরাচরে -
সে দৃশ্য আজও মনে পড়ে
চলে যেতে যেতে
একবার ঘুরে কি তাকিয়েছিলে, মনে নেই আজ ...
শুধু মনে হয়
চিরবিষন্ন কোনো বাতিঘর থেকে
কী যেন বলছো আমাকে
মনে হয় আলোবৃষ্টির পথে সেই থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছো...
চলে যাও, চলে যাও, দেখা হবে স্ট্যাচুদের দেশে...
মার্ডার কেস
এই ঝড়-জল-বৃষ্টির রাতে
আপনি কাকে খুঁজতে বেড়িয়েছেন, অফিসার ?
কে অপরাধী, আর কে অপরাধী নয় -
এ প্রশ্ন আবহমানের , প্রশ্নের জবাব জানেনা কেউ
বাইপাসের যে অংশটি চিররহস্যময়
আজ সেখানে ঘোরাফেরা করছে আপনার জিপ
সামনে সমস্ত চরাচর ঢেকে গেছে প্রলয়ের গানে
ঝাপসা আলোয় ভেসে যাওয়া এই অদ্ভুত শহরে
আপনি কাকে খুঁজতে বেড়িয়েছেন আজ ?
রাজারহাটের নিঃশব্দ বহুতল যেন এক আততায়ী হাওয়ায় সওয়ার
দু-একটা ছিনতাইবাজ , পেটি ক্রিমিনাল আজ ধরা পড়লেও পড়তে পারে
তা ছাড়া, বিধাননগর কমিশনারেটের কাছে খবর আছে -
আজ রাতে খুন হবে সিঙগিং বারের মোনালিসা
এই ঝড়-জল-দুর্যোগে তাই আপনিও বেড়িয়েছেন আঁটঘাট বেঁধে
ডিউটিতে ফাঁকি দেননি কখনো , আপনার প্রমোশন হোক…
তবু অফিসার , যে ছেলেটি টলমল পায়ে
কবেকার বাইপাসে হেঁটে যায় একা
যার কোথাও ফেরার নেই, হাজার মাইল বেগে
যাকে ফলো করে চলেছে পুরোনো মুখের কোলাজ
যাকে আজও ধাওয়া করে
কুর্গের কফিবাগানে ফেলে আসা এক জুন মাস
যার চোখে অবিশ্বাস, আর ঠোঁটে প্রিয় খুনীটির নাম -
তার জন্যে আজ এই বৃষ্টির রাতে , আপনি কি পারবেন
এই সরল মার্ডার কেস সল্ভ করে দিতে ?
হ্যান্ডশেক
যানজটে , হাজার মানুষের ভিড়ে
কারো কারো চোখ দেখে বোঝা যায় -
সেও এক পুড়ে যাওয়া প্রাণী ...
চোখাচোখি হলে, কথা হয়না
শুধু এক ব্রেকডাউন হয়ে যাওয়া গাড়ি
আর মাস্তুলভাঙ্গা এক জাহাজের মধ্যে
মৃদু এক হ্যান্ডশেক হয় ...
কিচ্ছু থামেনা , সিগনাল সবুজ হলে
সকলেই ছেড়ে বেরিয়ে যায় দূরে ...
শুধু এই সামান্য ছুঁয়ে যাওয়াটুকু
ঝলসানো শহরে এখনও বাঁচিয়ে রাখে
ছোট ছোট জলাশয় , গাছেদের ছায়া।