তোমাকে ভালবাসি
তোমাকে ভালবাসি, কত সহজেই আমরা উচ্চারণ করলাম,
অথচ তোমার সাথে আমার সঙ্গম নয়,
অঙ্কুরোদ্গম নয়, নয় কোন স্পর্শসুখও-
শুধুই একটা কথা, ভালবাসি।
ভালবাসি, একথা বলতেই
প্রতিবার একটা স্পন্দন হারাই,
মনে হয় থেমে যায় আহ্নিক গতি।
ভালবাসি, একথা বলতেই
সমস্ত আকাশ একটা উজ্জ্বল রঙে ভরে যায়।
বাতাসে সানাই বাজে, প্রকৃতিও অপরূপ সাজে।
সানজানা, শুধু আমি দেখি আর তুমি দেখতে পাও।
ভালবাসি, একথা বলতেই
নদীর জলে পাক খায় দুরন্ত ঘূর্ণি,
আর মাঝিও ভাটিয়ালী ভুলে যায়।
কতক্ষণ নিথর হয় উচ্ছ্বলিনী নদী।
আর ঠিক তখনই সঙ্গমলিপ্সায়
আমরা আরও কাছে আসি!
শুধু তোমার জন্যে
কার্যত যৌবনে আমার কোন প্রেম ছিল না,
আবার প্রেমহীনতাও ছিল না।
স্নেহময়ী এক অশীতিপর বৃদ্ধা
তার নাতনীদের দেখিয়ে বলেছিল,
বিপাশা তো বড় হয়ে যাবে,
মানাবেনা একটুও-
দীপশিখা চালাক অনেক,
তোকে এক হাটে কিনে
অন্য হাটে বিক্রি করে দেবে!
তারচেয়ে শুভ্রাই ভাল,
তোদের দুটিতে বেশ মানাবে।
সেই থেকে শুভ্রাই আমার প্রেম ছিল।
শুভ্রা না জানলেও ওর দাদী ঠিক জানত
আর আমি জানতাম, কারণে অকারণে
ওর কাছ ঘেষতাম, ওর ছোট হাত দুটি
অকারণে ধরে রাখতাম।
ও তখনও বোঝেনি কিছু
একদিন সেই যে শহরে গেল
আর ফিরে এলো না।
শুনেছি কোন এক প্রবাসী ছেলের
অঢেল অর্থের মোহে শুভ্রাও চলে যায়
আমাকে ফেলে।
সেই থেকে রাজপথ প্রেম হয়,
এ সমাজ ভাঙব, নতুন সমাজ গড়ব...
সেই প্রেমও পেটের ক্ষিধের কাছে
একদিন বিরহে হারায়।
অবশেষে কতদিন পরে,
সব আশা ছুঁড়ে ফেলে
যখন নিতান্তই হতাশায় মরি,
হঠাৎ আলোর শিখা হয়ে তুমি এলে,
দ্বিধা নিয়ে হাত ধরি।
সানজানা, শুধু তোমার জন্যে তাই
বাঁচার স্বপ্ন দেখি নতুন করে!
প্রতিটি সকাল
আজও চমৎকার ছিল সকালটা।
ভোরের বাতাসে ছিল শেষ শরতের স্নিগ্ধ মায়ার পরশ,
সূর্য়ের আলোটা ঝিকমিক কিরণ ছড়াচ্ছিল।
আমি অনেক প্রত্যাশা নিয়ে তোমার প্রতীক্ষায় ছিলাম।
বহুদিন দেখা না হওয়ার একটা কষ্ট থাকে,
জানিনা তুমি জান কিনা।
বহুদিন অদেখায় বুকের মাঝে কষ্টের বুদবুদ জমে,
জানিনা তুমি বোঝ কিনা।
আমি প্রতিটি সকালে তোমার প্রতীক্ষায় থাকি-
আমাদের গোপন অভিসারে।
আমি প্রতিটি সকাল তোমাকে নৈবেদ্য দেব,
প্রতিটি শিউলী ফুলের মালা রেখে দেব তোমার পুজায়,
শুধু আমার সকালকে উজ্জ্বল করে দিয়ে যাও!
একটা বিকেল
সকাল দুপুর ব্যস্ত থাকি জীবন নিয়ে যুদ্ধ করে,
একটা বিকেল আমারে দাও, ফুল বিছানো পথের ধারে
বসব দুজন, বলব কথা নীরবতায়।
একটি নদী বয়ে যাবে নীরব স্রোতে অনেক কথা বলে যাবে,
সূর্য তখন রঙ হারাবে, অন্ধকারে যেতে যেতে
একটি পাখি ফিরবে নীড়ে, সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলবে দূরে
আমরা শুধু থাকবো বসে হাতটি ধরে
বলব কথা, নীরবতা শুনবে শুধু
শুনবে শুধু নীরব আকাশ,
বিরহ বাতাস...
আমাদের একান্ত কিছু
আমাদের একান্ত কিছু ছিল,
তোমার কি আজ আর মনে আছে?
আমাদের একান্ত কিছু ছিল, একটা নির্জন খেলাঘর,
নির্জন পুকুরঘাট, কিম্বা গোধুলীর নির্জন প্রহর!
সকলে যখন হাটে, কিম্বা খেলার মাঠে,
আমরা নিভৃতে করেছি স্বপ্ন রচনা!
আমার এলোমেলো চুলে বিলি কেটে একদিন তুমি বলেছিলে,
সিঁথি করে চুল আঁচড়াও-
-ধুর, সিঁধি তো মেয়েরা করে, আমি পারবো না।
তুমি নিজহাতে সিঁধি করে আয়নার সামনে এনে বললে,
দ্যাখো, শশী কাপুর না? আমি অবাক হয়ে শশী কাপুর দেখি।
সেই থেকে অজস্র দিন আমিই নায়ক ছিলাম।
তুমি কখনও আমাকে নামে ডাকোনি,
আমাদের সম্বোধনের আলাদা ভাষা ছিল,
কখনো চোখের ইশারা, কখন হাতের,
শুধু দুজনের একান্ত সময়ে আমি রাণী ডেকেছি,
তুমি "এই", ব্যস! কেন যে রাণী ডেকেছি তা আজও জানি না।
আমিতো রাজা নই, তবুও কেন রাণী ডেকেছি,
তা ভেবে নিজেকে চরম বোকা মনে হয়!
আমার রাজ্যপাট নেই, মন্ত্রী নেই, শান্ত্রিসেপাই নেই,
শুধু একটা রাণীই ছিল! তোমার হৃদয়ে রাজা কি ছিলাম?
তুমি কখনও আমাকে নামে ডাকোনি,
সেই যে তোমার নতুন সংসারে, খেতে বসেছিলাম-
রতন, বাবু, আমি আর তোমার স্বামী,
মাছের বাটি নিয়ে তুমি বলোিছলে, তোকে দিই রতন? বাবু?
স্বামীর পাতে দিতে গিয়ে : তোমাাকে দিই,
আমার বেলায়? মুখপানে চেয়ে বলেছিলে : দিই?
সেদিন ও কোন সম্বোধন ছিল না!
আমাদের একান্ত আপন ছিল উত্তরের বকুল-গাছ
বাঁশঝাড়ের ছায়ার আঁধারে, কত স্মৃতি নিয়ে ছিল সেই গাছ!
এখন আর এই বকুলতলায় ভূতের উৎপাত নেই,
একসময় ভীষণ সতেজ ছিল সেই ভূত,
তুমিও ডরাতে, একদিন নিভৃতে ভূতের পরিচয় জানতেই
তোমার সে কি হাসি! তারপর নির্ভয়ে কতযে নিজস্ব সময়
কেটে গেছে, কেউ দেখেনি!