“অজানা সীমাঃ The X Boundary” - তানিয়া সরকার
“অজানা সীমাঃ The X Boundary” - তানিয়া সরকার


বার্ণিক প্রকাশিত “কত ভূত! কি অদ্ভুত!” এবং দিগন্ত প্রকাশিত শপজার বেস্টসেলার জয়ী উপন্যাস “সর্প মানবঃ নাগমণি রহস্য”-র পর প্রকাশিত হয়েছে সুমন সেনের তৃতীয় বই “অজানা সীমাঃ The X Boundary”।
স্বনামধন্য কল্পবিজ্ঞান ও রহস্য গল্পের লেখন অভিজ্ঞান রায় চৌধুরী বইটির ভূমিকায় লিখছেন, “...(কল্পবিজ্ঞান) এক্ষেত্রে পাঠককে সঙ্গে পেতে গেলে লেখককে সবার আগে ভালো গল্প বলিয়ে হতে হয় যাতে পাঠক একবার শুরু করলে গল্প শেষ না করে থামতে না পারে। একইসঙ্গে কল্পবিজ্ঞান লেখার জন্য অনেক বেশি পড়াশোনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর খানিকটা দখল, পথিবী জুড়ে কি হচ্ছে তার সাথে পরিচয় থাকা অত্যন্ত দরকার।”
আমার মতে উনি যথাযথই বলেছেন। গল্পগুলি পড়ে সেই কথাগুলি যে ভুল নয় তা আর বলার থাকে না। বইটির আটটি ছোটো গল্প একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।
প্রথম গল্প ‘সময়ের আতঙ্ক’-তে লেখক টাইম ট্রাভেলের মাধ্যমে একটা শিক্ষক-ছাত্রের সাধারন সম্পর্ক কিভাবে মোড় ঘুরে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পৌঁছোয় সেটা দেখিয়েছেন। একটি লোক কিভাবে টাইম মেশিন পাবার পর একটি সময়চক্রে ফেঁসে যান, তার বর্ণনা সুন্দর ভাবে দিয়েছেন লেখক। টাইম মেশিনটিও এখানে একেবারে অনন্য রকমের।
‘সূক্ষ্ম শরীরে’ গল্পটিকে যদিও কল্পবিজ্ঞানের আওতায় ফেলা যায় না। এটিকে রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প বললেই ভালো হয়। একটি মানুষ হঠাৎ অলৌকিক শক্তির অধিকারী হয়ে কিভাবে নায়ক থেকে খল-নায়কে রুপান্তরিত হয় সেটা গল্পটা শেষ অবধি পড়লে বোঝা যায়। যদিও শেষের দিকটা পড়ে মনে হবে গল্পটি যেন রহস্যকে অমিমাংসিত রেখেই শেষ হয়ে গেল। তবে পুরোটা পড়ার পর পাঠকেরা নিজের নিজের মত সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে পারবেন।
“...আপনি একা নন যে ড্রাগ নেওয়ার পর একটি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন। এ’রকম আরও বহু মানুষ আছেন বা ছিলেন। অ্যাপেল কম্পিউটারস্‌-এর স্বর্গীয় কর্ণধার স্টীভ জোবস্‌ নিউ ইয়র্ক টাইমস্‌ এর রিপোর্টার জন মার্কফ্‌-কে ২০০৫ সালে একটি ইন্টারভিউতে বলেন, ‘Doing LSD was one of the two or three most important things I have done in my life.’ LSD হল একটি ড্রাগ, আর তিনি এটাও বলেন – তার জীবনের উন্নতির পিছনে LSD-র একটা বড় অবদান রয়েছে। তাছাড়াও মাইক্রোসফট্‌ কর্পোরেশন-এর কর্ণধার বিল গেট্‌স্‌ ১৯৯৪ সালের প্লে-বয় ম্যাগাজিনের ইন্টারভিউতে স্বীকার করেন – তিনিও তার যৌবনকালে LSD নিয়েছিলেন। তাছাড়া ফ্রান্সিস ক্রিক্‌, জন সি. লিলি, রাল্ফ আব্রাহাম, রিচার্ড ফিন্‌ম্যান প্রভৃতি ব্যক্তিত্বরা LSD নিয়েছিলেন। রিচার্ড ব্রান্সন, কার্ল সেগান প্রভৃতি ব্যক্তিত্বরা গাঁজা টানতেন। লেখক টিম ফেরিস্‌ ‘আয়াহুয়াস্কা’ নামক একটি পাতা দিয়ে নেশা করেন। এমনকি থমাস আল্ভা এডিসন ‘ভিন মারিয়ানি’ নামক এক মাদক দ্রব্যের নেশা করতেন। তবে আমি বলছিনা যে – যেকোনো মানুষ নেশা করলেই সুপারহিউম্যান হয়ে যাবে, অথবা যেকোনো নেশা যেকোনো মানুষের উপর সঠিক প্রভাব ফেলবে। আমি এটা বলছি যে – অনেক সময় এ’রকম হয়ে যায়, যখন একটি নেশার ফলে মানুষের মস্তিষ্কের বিভিন্ন দরজা খুলে যায়। তখন মানুষ তার মাথার ১০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহার করতে পারে।...” – লেখকের প্রথম বই-এর চরিত্র বটুকবাবুর এই বক্তব্যটাই ‘ড্রাগ’ গল্পের মধ্যে সমস্ত কিছু বলে দিয়েছে।
কল্পবিজ্ঞানের খুবই অল্প মাত্রা দেখানো হয়েছে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ গল্পে। তবে বেশ ভালো কিশোর উপযোগী গল্প।
‘পরিত্রাতা’ – আমার মনে হয়েছে এটি বইটির একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ গল্প।। যেভাবে আমরা চোখ-কান বন্ধ রেখে পরিবেশ দূষন করেই চলেছি, তাতে আমাদের ভবিষ্যত এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি আসতে চলেছে তার সম্পর্কে একটা ছবি এঁকেছেন লেখক।
প্রাথমিকভাবে কোনো ভীনগ্রহীর গল্প মনে হলেও পরে বোঝা যায় ‘পরিব্যক্তি’ গল্পটা মানুষেরই উত্তরসুরীর গল্প। পারমাণবিক শক্তির অপপ্রয়োগ এবং মানুষের মিউটেশনের উপর ভিত্তি করে লেখা গল্পটি পড়তে পড়তে এক ভয়ানক চিন্তা চেপে বসে বুকের ভিতর – সত্যিই যদি এমনটা হয়! তবে গল্পের শেষের দিকটা উত্তেজনা একটু কম ছিল।
‘জাম্বুসি’ গল্পটা প্রাথমিকভাবে ‘দ্য ক্রনিকলস্‌ অফ নার্নিয়া’-র মত মনে হলেও পরে বোঝা যায় এটা ‘চতুর্থ মাত্রা’কে নিয়ে লেখা গল্প। চতুর্থ মাত্রায় প্রবেশ করে অন্যএকটা জগতে ভিন্যরুপ-ভিন্নভাষী লোকেদের সাথে সম্পর্কস্থাপন। মূলত একটা প্রেমকাহিনীর আখ্যান এটি।
‘ইলেক্ট্রোনট্‌’ হল পুরোপুরি একটি ফ্যান্টাসি গল্প। পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা এক অতিজাগতিক বস্তুর দ্বারা একটি সুপারহিরোর আবির্ভাব এবং এক শয়তান বিজ্ঞানীর এক্সপেরিমেন্ট জাত এক শক্তিশালী খলনায়কের যুদ্ধ। পুরো বইটিটিতে এটিই সবথেকে বড় গল্প। কিছু কিছু জায়গায় বাঁধন কিছুটা আলগা হলেও মোটের উপর ভালো।
“অজানা সীমাঃ The X Boundary” প্রত্যেক কল্পবিজ্ঞান-প্রেমী পাঠকদের অবশ্যই সংগ্রহ করার মতো একটি বই। লেখকের থেকে এরকম আরও অনেককিছু নতুন জিনিস পাবার অপেক্ষায় থাকব। 

অজানা সীমাঃ The X Boundary * সুমন সেন * বার্ণিক প্রকাশন * পৃষ্ঠা – ৬৪ * দাম – ১০০/-

সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান