গল্পকার : আবু সাঈদ তুলু
অবশেষে কথা রাখতেই হয়েছিল। হাজার
হলেও অতনু দার আমন্ত্রণ। দীর্ঘদিন পর কলকাতায় আসা আমার। গত রাতে এসে
পৌঁছেছি। সেসময় থেকেই অতনু দা সাথে ছিল। দুপুরের পর হঠাৎ তার কোন এক বন্ধুর
বাড়ি থেকে ফোন আসায় সোজা চলে গেছে। সন্ধ্যা গড়িয়ে এখন রাত প্রায় আট-টার
কাছাকাছি। ক্ষুধায় পেট চু চু করছে। কী করা উচিত। অবশেষে ‘ক্যাফে বাংলা’
লেখা দেখে এক রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম। অদ্ভূত কাণ্ড। কী সস্তা গরুর মাংস।
অ্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম আর ফোনে চেষ্টা করতে থাকলাম অতনু দাকে। হাজার হলেও অতনু দা আমার ঘণিষ্ঠ বন্ধু।
গতরাতে যখন কলকাতা এসে পৌঁছলাম তখন তো অতনু দার বাড়িতেই উঠেছিলাম। যদিও
রাতে খাওয়া হয় নাই। তবুও সোফার উপর খুব আরাম করেই ঘুমিয়েছিলাম। রাতে অবশ্য
অতনু দা বলেছিল সকালে কিন্তু ‘টিফিন’ খেতেই হবে। কী অসম্ভব নাকি সুস্বাদু।
ভোরে যে বাথরুমে ডুকতে হয়েছিল তার দুর্গন্ধে নাস্তার টিফিনের ইচ্ছাটাই
সেসময় শিকায় উঠেছিল। মনে মনে প্রার্থনা করেছিলাম- যতক্ষণ কলকাতায় থাকবো
ততক্ষণই যেন বাথরুমের প্রয়োজন না পড়ে। অবশেষে সকালে যখন নাস্তা ‘টিফিন’ এলো
তখন আমার চোখ ছানাবড়া। এটা তো দুটি বিস্কুটের একটি ছোট্ট প্যাকেট। গায়ে
নাম লেখা ‘টিফিন’। তারপরও তৃপ্তি সহকারে খেয়েছিলাম। দুপুরে অবশ্য অতনু দা
দুটো বড় বড় আলুর দম ছাড়া কিছু খায় না। তাই আমারও দুটোর আলুর টুকরো খেয়েই
কাটিয়ে দিতে হয়েছিল। এরিমধ্যে আবার অতনু দার ফোন। যা সব উড়ে গেল।
ইতোমধ্যে গরুর মাংস টেবিলে এসে হাজির। খোদ কলকাতায় এমন গরুর মাংস পাওয়া যায়
আমার জানা ছিল না। সবই ভাগ্য। গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করলাম। কী ভাগ্য- এমন
সময় অতনু দা ঘেমে গর্মে এসে হাজির। আমার প্লেটে এতোগুলো মাংসের টুকরো দেখে
সে প্রায় অজ্ঞান হবারই উপক্রম। আমি তাকে অনুরোধ করলাম খাসির মাংসের নেহারি
খেতে। ও অবাক বিস্ময়ে আমাকে জানালো তার বন্ধুর মা ফোন করেছিল সে বাড়িতে
অনেক আত্মীয় এসেছে সেখানে সে অনেক সন্দেশ খেয়েছে। তা অবশ্য বিশ গ্রামের কম
কোনভাবেই হবে না। সেগুলো হজম করার জন্যই তো বাসে-ট্রামে না এসে দৌঁড়াতে
দৌঁড়াতে আসতে হয়েছে। আমি মনে মনে স্বস্তি পেলাম। যা হোক, সেদিন রাতেই ছিল
আমার ফেরার পালা।
আমাকে এগিয়ে দিতে অতনু দা এয়ারপোর্ট পযন্ত এলো। কী
তার অমায়িক বদান্যতা। এয়ারপোর্টের লবিতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দুজন কথা বললাম।
শেষে বিদায় নিয়ে আমি যখন ইমিগ্রেশনের দিকে যাচ্ছিলাম। তখন হঠাৎ করে অতনু
দা বারবার হাত নাড়ছিল। হাত নাড়ার ভঙ্গিটা অবশ্য বিদায়ের বলে মনে হলো না।
তাই আমি আবার একটু ফেরত আসলাম। অতনু দার কাছাকাছি আসতেই অতনু দা বলে উঠলো-
‘উঃ যা! সারাটা দিন কাটলো তোমাকে তো কিছু খাওয়াতে পারতুম।’ আমি বললাম তা আর
করতে হবে না অতনু দা। তোমরা ভালো থেকো বলে বিদায় দিয়ে ইমিগ্রেশনে প্রবেশ
করলাম। অতনু দা-র আমন্ত্রণের স্মৃতি নিয়ে ক্যাচ অফ হলাম। একদিনের আমন্ত্রণ
সারাজীবনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠলো।