মৌলানা জালালুদ্দীন রুমি রহঃ এর মসনবী শরীফের
প্রথম খণ্ডের শের নং ১ হতে ৫৩ !
মওলানা জালালুদ্দিন রুমি এক মহাসমুদ্র। এলমে তাসাউফের ভাণ্ডার। মাওলানা
জালালুদ্দিন রুমি তেরো শতাব্দীর পারসিক কবি, দার্শনিক, সূফী, স্কোলার ।
মাওলানা রুমির অনুবাদ কৃত মসনবী শরীফের শের গুলির বঙ্গানুবাদ করেছেন জনাব
আবু নাসির। অসীম কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ স্রদ্ধেয় নাসির ভাইকে। আল্লাহ্ নাসির
ভাইকে দুনিয়া ও পরকালে নিরবচ্ছিন্ন সুখ শান্তি দান করুন এবং লেখার মাধ্যমে
দেশের জন্য আরও অনেক কাজ করার তাওফিক দান করুক ও সর্বদা রহমতের হেফাজত সহ
রহমতের চাদর দিয়ে ঢেকে রাখুন। আমিন। মসনবী - এ - রুমি প্রথম পর্ব।
(শের নাম্বার ১ থেকে ৫৩ ) মসনবী – এ - রুমি
শের নাম্বার -১
কান পেতে ঐ শোন সবে কেন বাঁশী কাঁদে
বাঁশী এবার পরেছে হায় বিচ্ছেদেরই ফাঁদে।
শোন কেন বাঁশী কাদে
বুঝো কেন বাঁশী কাদে।
শের নাম্বার-২
আমায় যখন তাড়িয়ে দিল পুস্প কানন হতে
শুধু আমি নই সবাই কেঁদেছে বিরহ জ্বালাতে।
শের নাম্বার-৩
আমার মতো বিরহ জ্বালায়
সবার বক্ষ চুর্ণ হোক,
বিরহ দহন মধুর কেমন
সবার প্রাণে একটু বাজুক।
শের নাম্বার-৪
আমায় যখন হল বের করা মোর আস্তানা থেকে
মন আবার চায় ফিরিতে মুল জায়গার দিকে।
শের নাম্বার-৫
তোমাদের এই সভায় কাঁদি
পেতে আমার নিজ ঠিকানা,
ভাল মন্দ আপন ভেবে
করেছি কি ভুল ভাবনা?
শের নাম্বার-৬
সবাই আমার হলো আপন
নিলাম যাদের আপন করে,
সকলেই মোর বাহির দেখে
মোর অন্তর রইলো একা পড়ে।।
শের নাম্বার-৭
আমার যত গোপন ব্যাথা গোপন কান্না
নাইকো জ্যোতি চক্ষু কর্ণের,আমার জ্বালা
কেউ বুঝেনা, কেউ দেখেনা।
শের নাম্বার-৮
তুমি আমার আমিও তোমার সব তো জানো
জেনেও কেন এমন মায়ায়
জড়িয়ে রেখে নাহি চেন!!
শের নাম্বার - ৯
আমার সুরের জ্বালা সমীরণ নয় অগ্নী সমান
নাই যাদের এই অনুভূতি মৃত্যুই তাদের এর প্রমান।
শের নাম্বার - ১০
আমার প্রেমের জ্বালা যখন
নির্গত হয় বাঁশীর সুরে,
এর শারাব পিয়ে সব ভুলে যাই
মত্ত হয়ে রই যে পড়ে।
শের নাম্বার - ১১
বাঁশীর সুরে দুর হলো মোর দিলের অন্ধকার
সহায় হলো আলো পেতে দুর হলো মনের আঁধার
শের নাম্বার-১২
বাঁশী আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু
বিষ তাড়ানোর মহৌষধ,
ও বন্ধু আমায় কররে আপন
গড়বো অমর স্মৃতিসৌধ।
শের নাম্বার-১৩
বাঁশীর কান্নায় মজনু এসে খুুজে ফিরে লায়লায়
আমি হলাম প্রেম বিবাগী খুঁজি ইলাহ্ লা ইলাহ্য়।
শের নাম্বার-১৪
বেহুশ হয়েই করবো আমি সকল হুশের সন্ধান
রসনা মেটাবো আমি জুড়াবে এ পোড়া প্রান।
শের নাম্বার-১৫
বাঁশীর কান্নার এমনি সুর যে সুরেতে মেলে সুধা
এমন সুধা একটু খেলেই মিটে যাবে সকল ক্ষুধা।
শের নাম্বার -১৬
আমি কাঁদি যার জন্য যার প্রমে হই পেরেশান
দিনগুলি যায় বিফলে মোর সাথী শুধু গোরস্থান।
শের নাম্বার-১৭
আমার দিন যদি যায় বিফলেতে যাক না
আমার ব্যাথা নাশক তুমি বন্ধু
আমায় ভুলে যেওনা।
নাইকো কোন ক্ষতির ভয় নাহি কিছু হারানোর
তুমি আমার সব শান্তনা
তোমার প্রেমে রই বিভোর।
শের নাম্বার-১৮
আমি চাই না হতে ঐ নদীর মীন
পিপাসা মোর সমুদ্রের
তোমরা চাইলে যাও নদীতে
আমার স্বপ্ন উঁচু পাহাড়ের।
শের নাম্বার-১৯
তুমি আমায় বুঝবে নাগো তুমি আমায় বুঝবে না
এবার তুমি যাও গো চলে অনুমানে কাজ হয় না।
শের নাম্বার-২০
আর হবো না আবদ্ধ ঐ সুখ সাগরের মায়াতে
এবার মুক্ত হতে হবে সকল মায়া এড়াতে।
শের নাম্বার-২১
অসীম তুমি সীমিত আমি
শক্তি আমার বাড়িয়ে দাও,
আমার সীমা বিলীন করে
তোমার অসীম আমায় দাও।
শের নাম্বার-২২
বন্ধ করো তোমার দেয়া লোভাতুর ঐ দুই পেয়ালা
বড্ড ক্ষুধা এদের মাঝে আমায় শুধু দেয় জ্বালা।
শের নাম্বার-২৩
তোমার ভূষণ ছিন্ন করে
আমার বুকে নাও গো ঠাঁই
তোমায় পেলে সবই পাবো
তুমি বিনে কেউ আপন নাই।
শের নাম্বার-২৪
হে মোর বন্ধু দয়ার সিন্ধু
তোমার সুখেই আমি সুখী
তোমার দেখা না পাইলে
আমি হবো জনম দুখী
তখন আমি হবো চির রোগী
হারাবে মোর সকল সুখ
তোমার দরশন হবে আমার দাওয়াই
হে মোর প্রভু তুমি আমার মনের চিকিৎসক।।
শের নাম্বার-২৫
আমার মনের পংকিলতা দুর কর হে দয়াময়
লভিব পুন্য আত্না ভাসবো তোমার করুনায়।
শের নাম্বার-২৬
প্রেম পেয়ে আজ ভাঙ্গা তরী ছুটে চলে উর্দ্ধ পানে
বিশ্ব আজি মত্ত হলো অমিয় সুধা প্রেমের গানে।
শের নাম্বার-২৭
নুর হেরিয়া বেহুশ হয়ে রই পড়ে
সহ্য করতে না পেরে,
পুড়ে সবই হল ছাই ভস্ম
এসকের আগুনে পুড়ে।
শের নাম্বার-২৮
তোমার ওষ্ঠে ওষ্ঠ মেলাতে চাই যে আমি
গাইতে চাই গান তোমার হে প্রেমের অন্তরর্যামী।
শের নাম্বার-২৯
আমি যখন ছিটকে পড়লাম তোমা হতে
অন্ধকারে ঘিরলো আমায় রাঙ্গা প্রাতে।
শের নাম্বার-৩০
গুলবাগিচা শুন্য আজি পুস্প নাই কুঞ্জ বনে
বুলবুলি হলো নিরব গাইবে না গান আপন মনে।
শের নাম্বার-৩১
আর পাবি না পুস্প আজি
সময় জ্ঞান নাই তোর মাঝে
এলি কেন সুভাস নিতে
বেলা শেষের এই সাঁঝে?
নিজের ভুলে বেভুল হইলি
নিজের ভুল কখনো খুঁজলি না
অসময়ের বুলবুলি তুই যারে ফিরে
ফুলের সুভাস আর পাবি না।
শের নাম্বার-৩২
উচ্চ সুরে মিহি সুরে সকল সুরেই আছো তুমি
পারি না যে প্রকাশিতে,ধ্বংস হয়ে যাবো আমি!
শের নাম্বার-৩৩
তালা মেরে চাবি নিয়ে আছো তুমি বসে দুরে
আমি দোষী জগৎ এবার ধ্বংস হবে আমার সুরে।
শের নাম্বার-৩৪
তুমি মাশুক আমি আশেক তুমি আমার আবরন
তুমি বিনা নিস্প্রান আমি ছেড়ে গেলে হবে মরণ
তোমার মাঝে ঠাঁই পেয়ে আজ হলার আমি ফানা
সাগর আমার বুকে এখন তুমি আর নাই অজানা।
শের নাম্বার-৩৫
আমি হবো মরুভূমি যদি না পাই করুণার বারি
উড়বো শুধু এদিগ ওদিগ হয়ে সুতো ছেড়া ঘুড়ি।
শের নাম্বার-৩৬
হে আমার প্রেমের আলো
করো আমায় আলোকিত
সব কিছুতেই হবো জ্ঞাত
হবো আমি পুলকিত।
শের নাম্বার-৩৭
নুর-উন-আলা নুর তুমি
তোমার নুরে ঢাকো আমায়
দুর করে দাও সকল আঁধার
দাও ঠাঁই মোরে নুরের দরিয়ায়।
শের নাম্বার-৩৮
হৃদয় আমার স্বচ্ছ করো ভেতরে আছে অন্ধকার
দয়া করো হে দয়াময় দুর করো মনের আঁধার।
শের নাম্বার-৩৯
তুমি জানো আমার হৃদয় পংকিল ময়
অন্ধ আমি দৃষ্টি ভরা মরিচায়।
শের নাম্বার-৪০
হবে যখন মনের আয়নার ময়লা দূর
তখন মনে বাজবে তোমার প্রেমের সুর।
মৌলানা সাহেবের জ্ঞানের দ্বিতীয় স্তর।
শের নাম্বার-৪১
" রাও তু যঙ্গার আয রুখে উ পাক কুন
বা'দাযাঁ আঁ নুররা এ দরাক কুন।"
মিশন শুরু কর এবার মনের ময়লা দূর করিবার
দেখবি আলো ঘুচবে তখন চারিদিকের সকল আঁধার।
যখন বুঝবি আলো আর অন্ধকারের বিভেদ
তখন পাবি নূরের মজা আসল নূরের রহস্য ভেদ।
শের নাম্বার-৪২
" বেশনা ওয়েদ আয় দোসতাঁ ঈ দাসতাঁ
খোদ হাকীকত নাকদে হালে মাস্ত আঁ।"
ত্যাগ কর তোর কাম বাসনা
কু প্রবৃত্তি সকল রোগ
প্রেমের খেলার আসল মজা
করতে পারবি তখন ভোগ।
শের নাম্বার-৪৩
" নাকদে হালে খেশ রা গার পায় বরেম
হাম যে দুনয়া হাম যে উকবা বর খুরেশ।"
চিন্তা কর তুই নিজেকে নিয়ে
দেখ তোর ছবি কত সুন্দর
চিনবি যখন বুঝতে পারবি
কে আপন আর কে শত্রু তোর।
শের নাম্বার-৪৪
" ঈ হকীকত রা শনূ আয গোশো দেল
তা বেঁরূ আঈ বকুল্লী যাব ও গেল।"
সজাগ কর তোর ইন্দ্রীয় জ্ঞান
ভালো মন্দ নে চিনে
মন্দ ছেড়ে ঢুকতে পারবি
সকল সুঘ্রান বাগানে।।
শের নাম্বার-৪৫
ফাহম্ গের্দারেদ ওজঁরা রাহ দেহীদ
বা'দাযাঁ আয শওক পা দাররাহ্ নেহীদ।
শুদ্ধ কর তোর অন্তর আত্মা
শুদ্ধ কর তুই নিজেকে
এবার যা চলে খুশী মনে
জ্ঞানের পথ ডাকছে তোকে।।
শের নাম্বার-৪৬
বুদ শাহে দার যমানে পেশাযীঁ
মুলকে দুনয়া বুদাশ ও হাম মুলকে দীঁ।
বাদশা তুমি দীন্ দুনিয়ার
ভুল করোনা, সাবধান!
দুগ্ধ নষ্ট হয়ে যাবে
পেলে লেবুর একটু ঘ্রান।
শের নাম্বার-৪৭
এত্তে ফাকনে শাহ্ রুযে শুদ সওয়ার
বা খাওয়াছে খেশ আয বাহরে শিকার।
ক্ষমতা পেয়ে ধরলি শিকার
নিজে শিকার হোসনে
সময় থাকতে সাবধান হ তুই
নিজের ভালো বুঝিস নে?
শের নাম্বার-৪৮
বাহরে ছাইদে মিশুদ উ বার কাহো দাশত
নাগাহাঁদার দামে এশক ঊ ছাইদ গাশত।
শিকার করতে গিয়ে তুই
নিজেই হইলি অন্যের শিকার
ভুল পথে তুই পা রেখে
জীবনটাকে করলি বেকার।।
শের নাম্বার-৪৯
এক কানীযক দীদ উ বর শাহেরাহ্
শুদ গোলামে আঁ কানীযক জানে শাহ্।
বাদশাহ্ ছিলি দুই ভূবনের
তুই একি করলি ভুল!
আসল ছেড়ে নকল ধরে
হইলি তুই তার পাগল!
শের নাম্বার-৫০
মোর গে জানাশ দার কাশাফ চুঁ দার ত্বপীদ
দাদ মালো আঁ কানীযক রা খারীদ।
পাগল হয়ে মুল্য দিয়ে
খরিদ করলি দুনিয়া
কিসের লোভে ওরে বেভুল
গেলি! আসল সত্ত্বা ভুলিয়া।
শের নাম্বার-৫১
চুঁ খরীদ উরা ও বরখোদদারে শুদ
আঁ কানীযক আয কাযা বীমার শুদ।
করলি খরিদ আসল ভেবে
বুঝলি না তুই আসল কি না
হাতে নিয়ে দেখলি নেড়ে
আসলে তা নকল সোনা।।
শের নাম্বার-৫২
আঁ একে খাবদাশত পালানাশ নাবুদ
ইয়াফত পালা গুর্গ খাররা দার রেবুদ।
অবলম্বন যা ছিলো তোর
কাজে লাগাতে পারলি না
বিনা যত্নে হারালো তাহা
ধরে রাখতে পারলি না।
শের নাম্বার-৫৩
কূযাহ বূদাশ আব মী নামদ বদাস্ত
আব বা চূঁ ইয়াফত খোদ কূযাহ শেকাস্ত।
হাতে ছিলো পেয়ালা তোর
পানি ছিলো অনেক দূর
পানির দেখা মিললো যখন
পেয়ালা ভেঙ্গে হলো চূর।।