হাউস [] ফয়সাল সাকিদার আরিফ
হাউস [] ফয়সাল সাকিদার আরিফ

পোয়াতি বউক নিন্দি থুইয়া বিছনাৎ ক্যাবল চেত্তর হইচোম। কওয়া নাই-বোলা নাই দপদপানি মাইকিং!

-‘ ভা..ই..স..বো, বিরাট আনন্দের সংবাদ; খুশির সংবাদ! ’

খুশির কতা শুনি এনা নড়িচড়ি বসনু। ভাইরাসের দিনগুলাৎ ইম্নি হামার জিউ সোগসময় আটালৎ উটি থাকে। মাইকের মড়মড়িতে ছাওয়া কোনাও জড়োসড়ো হয়া মোর বোগলত আসি বসিল্। হামরা মাও-ব্যাটা খরগোশের মতন কানখাঁড়া করি মাইকৎ মন ঠ্যাসি দিনো।

- ‘ ভা..ই..স..বো। সকলকে আমাদের পক্ষ হইতে ইদ মুবারক। আগামীকাল পাঠানের মোড়ে বিশাল একখানা পাহাড়িয়া আড়িয়া মহিষ জবেহ করে বাটি লাগানো হইবে। যাহারা পাহাড়িয়া আড়িয়া মহিষের মাংসের স্বাদ নিতে চান, তারা ইজ্জত আলীর দোকানে নিজ নিজ নাম লিস্টি করিবেন। প্রতি ভাগা মাংসের মূল্য মাত্র ১হাজার টাকা! আগে আসলে, আগে পাইবেন। ভা..ই..স..বো।’

পয়লা মাইকিং শুনি ভাল্ ঠেকছিলো, মুরাই শোনার পর বুকের মইদ্যত চিরচির করি উটিল্। ‘ট্যেকা নাই ঝুলিৎ, ফকির নাচে খুলিৎ’ মোর কপালৎ ঝুলিও নাই; খুলিও নাই! কাল দিন পরে ইদ তাও সরণ আছিল্ না! ওমার গোসতের মাইকিং শুনি মনৎ পড়িল্ ইদের কতা!

-‘আব্বা, ও আব্বা? তোমরা হামার ইদের গোসতো কিনবার নন? কালকা হনা পাঠানের মোড়ৎ মহিষের গোসতো বাটি নাগাবে। তোমরাও এক ভাগা আনেন গো। ম্যালাদিন হয় গোসতো খাই না।’ ছাওয়াকোনা চট্ করি কতা কয়া মোর মুকের দিকে হা করি চ্যায়া আচে!

ছাওয়ার কতার পর মোর মুক দিয়া আর আও বাড়াইল না। মাওরিয়ার মতো ফ্যালেফ্যালে চায়া ছাওয়ার মাতাত্ হাত শোত্তে কনু- ' ইদ তো এলাও ম্যালা দিন বাকি মাও। আনিম এলা, কোটে আর গোসতো ফুড়ি গেইল্। খেতা গোঞ্জে ভাল্ করি শুতি পড়েক, দেকিস না বাইরৎ ঝরি-বাতাস, ঠান্ডা নাকবে এলা।'

উষশি পড়া ছইঞ্চার পানিত মুক-হাত ধুইয়া খোড়া ভরি চারটা চাউলচিড়া খায়া আল্লা-রাসুল জপি ভাবনু- 'হাজারখানিক ট্যেকা জোগার করা ফরজ। ট্যেকা পাইলে অনততো এক ভাগা গোসতো কিনি প্যাটফুলি ভাত খামো! তাতেই ছাওয়ার ইদ, আর হামার শান্তি!

তামান আইত কোনপাকে ফুরি গেইল্ ঠাওর নাই! পত্যায় তো আর ইদ নোয়ায়। তাই সাত-পাঁচ ভাবি বেল্-সকালে ঘাঁটা ধরনু আমজাদের বাড়ির ফেরে। ইদের পরের শুক্রুবার শোদ করার শর্তে কয়া-বুলি হাজার ট্যেকা হাওলাত নিয়ে ভনভনে পাও ফালানু পাঠানের মোড়ের দিকে। নাম আগে লিস্টিৎ না করলে পরে যদি ভাগা না পাওয়া যায়? তখন হইবে আরেক মুছিবত!

পাঠানের মোড়ৎ ম্যালা মানষের জটলা! দূর থাকি মনেহয় হইহুল্লোর মজমা! বাঁশের এক্টা নোকার সাথে লম্বা দড়ি দিয়া মহিষা বান্দা। ছাওয়া-বুইড়া সগাই তাকে ঘিরি আমঠাঁওড় গপ্পে মত্ত। ভাবনু, আগত ইজ্জত আলীর দোকানৎ যাম। নাম লিস্টি করি তারপর ওমার গপ্পৎ ভাগ বাসামো, গাল গপ্প কি মুইও কম জানোম?

ওমা! তপনের প্যাঁচৎ গোঁঞ্জে থোয়া ট্যেকা বাইর করিম, দেকি ট্যেকা নাই! ইজ্জত আলী মোর মুকের কাচুমাচু দেকি কইলো- ‘ কী বক্কর মিয়া, ট্যেকা বাইর করো! ট্যেকা ছাড়া নাম লিস্টি হবার নয় কয়া দিনু। বাকি টাকি করেন না, নগত-নারায়ণ ছাড়া গোসতো হবার নয়!’

মোর মাথাৎ তখন ‘ইন্নালিল্লাহ্’ ছাড়া আর কিচ্চু নাই! বিদ্যুৎচমকের মতো মুই সরণ করার চেষ্টা করনু কোটে ট্যেকাটা ফালানু! তপনখ্যান উল্টিপাল্টে তিন ঝারা দিয়া দেকনু; নাহ্, কোনেঠে নাই!

তামান বেলা আমজাদের বাড়ি আর পাঠানের মোড়ৎ চক্কর দিতেই পাড় হাইল্। কয় চক্কর দিচোম মোনৎ নাই!খুলি, কাইঞ্চা, পলের পালা, বাঁশের আড়া ধরি তামান ঘাটা তন্নতন্ন করচোম! এমন কোনোঠে নাই খোজম নাই! ঘাঁটাৎ যাকে পাম, তাকেই কম- ‘একটা নালঅঙের চকচকা হাজার ট্যেকার নোট দেকচেন গো? মোর প্যাঁচত থাকি হারে গেচে!’ সগাই শোনে আর ছাগলের মতো মাতা নটপটায়! কাইও আর স্বীকার হয় না।

কায় শোনে কার কতা! ভাটিবেলা হইলে লিস্টি ধরি ভাগার গোসতো বিলি করা শুরু করচে ইজ্জত আলী! গোসতোর টোপলা ঝুলিঝুলি বাড়ি ফিরচে অনেকেই। মোর ট্যেকা না থাকায় আর গোসতো কেনার জোঁ নাই! কারো ভাগত হাড্ডি বেশি, কাইও চরোপ কম পাইলো তারে গোদর-গোদরে মোর কান ঝালাপালা! ত্যাক্ত, বিরক্ত আর হয়রানিতে মোর কাহিল অবস্থা!

মুই এলা কোটে যাম? কার কাচৎ কম ছাওয়ার হাউসের কতা? ইনের ইনোও বাড়লো, গোসতোও আর কেনা হইল্ না! বউ-ছাওয়া ঘাঁটা চায়া আছে, আর মুই চায়া আছম আল্লার দিকে। আল্লা অহমত দেও। হারানো ট্যেকা ফেরত দেও, নাহয় গোসতো দেও! হাউস মিটানোর ব্যবস্তা করো মা'বুদ।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান