গিরীশ গৈরিক
জন্ম: ১৫ আগস্ট ১৯৮৭, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামে।
শিক্ষা: হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর। পেশা: সাংবাদিকতা।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘ক্ষুধার্ত ধানের নামতা-২০১৬’, ‘মা আদিপর্ব-২০১৭’ , ‘ডোম-২০১৮’ ও ‘মেডিটেশনগুচ্ছ-২০২০’ ।
সম্পাদনা: ‘বৈঠকখানায় নির্মলেন্দু গুণ-২০২০’। প্রধান সম্পাদক: www.poemvein.com। সংগঠন: ‘গীতাঞ্জলি সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি’ ও ‘বাংলাদেশ কবিতা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক’।
E-mail:girishgoiric@gmail.com,
https://www.facebook.com/girish.bangali.9
জন্মান্ধ কলম
একটি অন্ধকারের কবিতা লিখবো বলে
জন্মের পূর্বে ও মৃত্যুর পর থেকে বসে আছি।
যখনই সাদা খাতায় কালো কালিতে অন্ধকারের কবিতা লিখতে যাই--
তখনই সাদা খাতাজুড়ে আঁধার নেমে আসে
পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়।
আমি কেমন করে--অন্ধকার খাতায়
কালো কালিতে রোপণ করব কবিতা!
আলো জন্মের বহু আগে থেকেই আমি অন্ধ
তবুও তোমরা কেউ কি আমায় একটি জন্মান্ধ আয়না দিবে?
আমি একটি অন্ধকারের কবিতা লিখবো।
প্রশ্ন ও উত্তরের বাহিরে
কিছু কথার প্রশ্ন আছে উত্তর নেই
কিছু কথার উত্তর আছে প্রশ্ন নেই
তোমার এই চুপ থাকা প্রশ্ন ও উত্তরের ঊর্ধ্বে।
পৃথিবীতে কে কে চুপ থাকতে ভালোবাসে-
মানুষ, পাখি, মাছ কিংবা পশু
কেউ নয়, শুধু বৃক্ষই চুপ থাকে নিভৃতে।
নীরব তার ভাষা--প্রেম-জীবনের ঘা।
তবুও হেমন্ত এলে সবুজ পাতা হলুদ হয়ে যায়
পাতার সাথে ঝরে পড়ে বেদনা।
বাবা, তোমার ছবি আজ নীরব বৃক্ষ
আমরা তার ঝরে যাওয়া হলুদ পাতা!
ধর্ম
বটবৃক্ষ বনসাই হয়ে ফুটে আছে টবের কারাগারে
তাঁকে ছেটে কেটে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করা হলো
সেই ক্ষুদ্রতার মাঝেই ফুলে ফলে ভরে গেল তাঁর দেহমন।
বেঁচে থাকার এই অনুপম শিল্পকে আনন্দময় মনে হয় কী!
এমনই একদিনে বটবৃক্ষের মালিক তাঁকে জিজ্ঞাসিলো--
দেখেছিস--আমি তোকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম করে ফলের পূর্ণতা দিয়েছি।
প্রতিউত্তরে বনসাই বটবৃক্ষ তাকে বললো--
আমার একটি ফলের বীজ মাটিতে লাগিয়ে দেখ,
আমি আবার পূর্বপুরুষের মতো বৃহৎ ও প্রকাণ্ড হয়ে উঠবো।
পুনশ্চ: এখনও দক্ষিণা বাতাসে ফুল ফোটার শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়।
সম্মোহন
তুমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছো
তবুও তোমার ছায়া থরথর করে কাঁপছে।
এই দৃশ্য দেখতে দেখতে আমার নিজের ছায়া বিলীন...
সেই থেকে আমি শত আলোর মাঝেও ছায়াহীন।
পৃথিবীর বাতাসে ভ‚মিষ্ঠ শিশুর প্রথম নিঃশ্বাসের আনন্দের মতো--
একদিন সূর্য উঠলো--প্রভাতের সূর্য।
আমি জাতিস্মর শিশু হয়ে সূর্যের ছায়া অনুসন্ধান করেছি--
না, কোথাও সূর্যের ছায়ার সন্ধান মেলেনি।
তাই আমার ছায়াহীন দুঃখ, এই ভেবে লাঘব করি--
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মেঘ একই রঙে রঙিন
যেন মায়ের কপালের সিঁদুর--আনন্দময়।
জীবনের কিছুকথা যখন পবিত্র হয়ে যায়
সেইসব কথার গন্ধ শুঁকে আমরা কি বলতে পারি--
মাতৃগর্ভের স্মৃতি কেমন ছিল?
আত্মদীপো ভব
রক্তক্ষরণের দিনলিপি নিমগ্নতার জ্বলে ভিজে কী পবিত্র হয়?
জীবনের এমন একটি প্রশ্ন-আরেকটি প্রশ্নের মুখোমুখি হলে
হয়তো-বা উত্তরের অন্বেষণ প্রশ্নদ্বয়ের অন্তরভেদী স্তব্ধতা
কিংবা জন্ম ও মৃত্যুর অজানা কুয়াশা।
জন্মের সত্যতা নিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মনে হয়--
কেন এই মায়াজাল, কেন জীবনের ভেতর-বাহির জুড়ে স্তব্ধতা!
জীবনের কলকাকলি--সুখ ও দুঃখের কলতান
শিশিরের জলে খলবলিয়ে হাসে
আবার সূর্যতাপে কেঁদে কেঁদে বিলীন হয়ে যায়।
বিলীন হয়ে কোথায় যায়?
আবার কেমন করে ফিরে আসে--
নদীর তীরে
পাখির কূজনে
ঝর্নার সিঞ্চনে
ভূমিষ্ঠ শিশুর আনন্দ চিৎকারে।
ব্যাকরণ
তুমি দাঁড়িয়ে আছো--অকারণে
ধ্যানী বুদ্ধের মতো নীরব হয়ে।
কারণেরও কারণ থাকে--অকারণেরও কারণ
তাই তুমি বুদ্ধ--বোধের অতীত।
আমি দাঁড়িয়ে আছি--কারণে
তুমি দাঁড়িয়ে আছো--অকারণে
আমার কারণ ও তোমার অকারণ মিলে--
ব্যাকরণ।
সেই ব্যাকরণে একটি শব্দ সমুজ্জ্বল হয়ে আছে--
ভালোবাসা।
প্রার্থনা
পৃথিবীতে আবার একটি নতুন সকাল এসেছে
‘আবার’ শব্দটি প্রমাণ করে পূর্বে আরেকটি সকাল ছিল।
এভাবে ‘আবার ও আরেকটি’ শব্দদ্বয় প্রমাণ করে
নতুন একটি সকালের প্রত্যাশা।
নতুন সকালে তুমি আসবে
আমরা সেই প্রত্যাশায় দাঁড়িয়ে আছি।
ফুল ফোটে, ফুল ঝরে যায়
আমরা তোমার প্রত্যাশায় দাঁড়িয়ে আছি।
আলো এসে আঁধারে লীন হয়ে যায়
তবুও তোমার প্রত্যাশায় দাঁড়িয়ে আছি।
আমরা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেখি--
অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমস্ত সকাল
তোমার অপেক্ষায় করজোড়ে দাঁড়িয়ে আছে।