একটি অলঙ্ঘনীয়, অমার্জনীয়, অনিবার্য ধারাবাহিকতার অমসৃণ পথ বেয়ে অত্যন্ত স্বাভাবিক নিয়ম রক্ষার প্রয়োজনে বাধ্য হয়েই হয়তো একটি কঙ্কালসদৃশ অঙ্গহীন প্রতিবন্ধির মতো যেন প্রতি বছরের বিশেষ একটি দিন আমাদের জাতীয় জীবনে- ‘বিজয় দিবস’- নামের বিকলাঙ্গ একটি প্রতিচ্ছায়া আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তীব্র টকটকে লাল, দু’চোখের তী² দৃষ্টি। ঈশ্বর যেন আমাদের উপলদ্ধির শরীরে, চেতনার হৃৎপিন্ডে ভ্রণকুটি হানতে থাকে, তিরস্কার করতে থাকে আমাদের বিবেক বোধকে, সত্যকে বিকৃত করবার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাকে। কিন্তু, এসব করে কোন ফলই সে প্রাপ্ত হয় না। অবশেষে ক্লান্তিতে নুয়ে কল্পনার দৃষ্টিতে আমাদের দিকে অবিচল তাকিয়ে থেকে এক সময় কালের গর্ভে অদৃশ্য হয়ে যায় দিবসটি। পেছনে রেখে যায় প্রচন্ড ঘৃণা আর উপহাসের দীর্ঘশ্বাস। যে দীর্ঘশ্বাসের মাত্রাধিক উত্তপ্ততায় পুড়তে থাকে একটি জাতি পরবর্তী বারোটি মাসের জন্য।
আর এর মূল কারণ আমাদের স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের পর থেকে শুরু হওয়া বাঙ্গালী জাতীটিকে সর্বোতভাবে নির্মুলের লক্ষ্যে ধ্বর্মান্ধ উগ্র মৌলবাদ, পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতা-প্রাপ্ত অতি উগ্র প্রতিহিংসা পরায়ন পাকিস্তানী দালাল চেেক্রর স্বাধীন বাংলাদেশ বিরোধী মারাত্মক হিংসাত্মক কর্মকান্ডএবং জঙ্গিবাদের প্রবল উত্থানÑ যা প্রতি মূহুর্তে চেয়েছে বাংলাদেশের বুকভভরা অহঙ্কার “বিজয় দিবস”-কে আত্মসাৎ করতে।
কোন দৃষ্টিকোণ থেকে, কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আমরা বিবেচনা করবো আমাদের জাতীয় জীবনের চরম এবং পরম আর সর্বোচ্চ প্রাপ্তি মহান বিজয় দিবসকে? একে কেবলমাত্র একটি শক্তিধর পেশাদার সামরিক বাহিনীর পরাজয়ের বৃত্তেই সীমাবদ্ধ রেখে আত্মতৃপ্ততায় মগ্ন হয়ে প্রশান্তির অতলান্ত সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়া যায়? নাকি শুধু মাত্র মেকী উল্লাসের চূড়ান্ত শীর্ষে উঠে অহংবোধের নিকৃষ্টতম উচ্ছাসের মধ্যেই সীমায়িত করা যায়? যায় না, যাবে না কখনও। কিন্তু কেন যায় না, কেন যাবে না। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তরও তো আমাদেরকে উদ্ধার করতে হবে অত্যন্ত সচেতন এবং সর্বোচ্চ সর্তকর্তার মধ্যে দিয়ে। বিজয় দিবস তো নিছক একটি সাদামাটা বিজয়কেই শুধু নিশ্চিত করেনি। নিশ্চিত করেছে শুধু স্বাধীনতাকেই নয় জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সর্বশেষ পরিণতিকেও। যে আন্দোলনের বীজ রোপিত হয়েছিল ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে একটি সামরিক নিকৃষ্টটতম অবাঞ্ছিত শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রমত্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে এবং যে বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটেছিল ১৯৭১ সালের নির্দিষ্ট একটি মাসের, নির্দিষ্ট একটি বিশেষ তারিখ সাতই মার্চের বিশেষ একটি ভাষণের বিশেষ দুটি বাক্যের মাধ্যমে যা “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” স্বাধীনতার পূর্বে “স্বাধীনতা”- কথাটিই বেরিয়ে এসেছিল লক্ষ কোটি জনতার হৃৎপিন্ড চিড়ে বেরিয়ে আসা আকাঙ্খার প্রতিফলন হয়ে। এবং ঠিক সে মুহুর্তেই নির্ধারিত হয়ে গেছে মহান বিজয় দিবসের ভাগ্যটিও। সাথে সাথে নিশ্চিত করেছে ইতিহাসের যুগ সন্ধিক্ষণের নির্দিষ্ট কাল পর্ব টিকেও।
এখানে- ‘ইতিহাসের যুগ সন্ধিক্ষণ’- এবং সমাজ বিপ্লব’- সম্পর্কে কিছু কথা বলা বোধ করি প্রয়োজনীয় ও প্রাসংগিক হবে। “রাজনৈতিক সাহিত্যমালা”- গ্রন্থভুক্ত ইয়ে প্লিমাক ও আঃ ভারোদিন রচিত’- বিপ্লব ও বিপ্লবের তত্ত¡’ প্রবন্ধে ‘ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ’কে এভাবেই বিবেচনা করা হয়েছে “মানব সমাজে ইতিহাসের চূড়ান্ত চরম মুহুর্তগুলি হল তার জীবনের সন্ধিক্ষণ, যখন সেক্ষেত্রে একটি সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ধসে পড়ে ও নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সন্ধিক্ষণ গুলিইতো সমাজ বিপ্লব, বস্তুতঃ সমাজ বিপ্লবের একটি পর্যায় থেকে অন্যতম পর্যায়ে উত্তরণ। অগ্রসরতর একটি সংগঠন তার জন্মদাতা সংগঠনটিকেই প্রতিস্থাপিত করে। এই রূপান্তরই ঐতিহাসিক প্রগতির অভিব্যক্তি।’ আমাদের মতে বিবেচনাটি সঠিক এবং এ সঠিকতার প্রমাণ আমাদের জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের মতো একটি মৌলিক সাফল্যের বিষ্ময়কর অভিব্যক্তি বাস্তবায়ন প্রকল্পের মূর্ত অবির্ভাব। কিন্তু এ সফল আবির্ভাবের অন্তরালবর্তী অভিব্যক্তি বাস্তবায়ন প্রকল্পের অগ্রসরমানতার গতিবেগের মাত্রাটি কতখানি উচ্চতম? প্রশ্নটি এখানেই। এবং প্রশ্নটির উত্তর খুঁজবার জন্যই বত্রিশটি বছর ধরে একটি বিশেষ দিন বিজয় দিবস হয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং প্রশ্নবানটি দিয়ে অবিরত বিদ্ধ করতে থাকে আমাদেরকে। আমরা উত্তর খুঁজে পাইনা, উত্তর দিতে পারি না। নির্বাক চোখে সকরুণ দৃষ্টিতে জরাজীর্ণ অদ্ভুত জীবের মত শুধু অনিমেষ তাঁকিয়ে থাকি তার দিকে। এক সময় বিফল মনোরথে ফিরে যায় আমাদের বিজয় দিবস আমাদের চোখের সামনে থেকে আমাদের ব্যর্থতাকে তিরস্কার করতে করতে।। কথাগুলি কিছুটা আবেগশ্রিত কাব্যিক ভঙ্গিমার হলেও এটাইতো প্রকৃত বাস্তবতা। যে বিজয় দিবস সকল সামাজিক আকাক্ষা বাস্তবায়নের সফল উপাদান সে উপাদানকে অবলম্বন করে বিগত বত্রিশটি বছর আমাদের সামাজিক অগ্রগতি এবংআকাক্ষা পূরনের অভিব্যক্তির স্বার্থকতা আনুপাতিক হিসেবে শতকরা পাঁচ ভাগেরও নীচে। বত্রিশ বছরের মধ্যে পনের বছরই তো অতিক্রান্ত হয়েছে পূর্বোক্ত সামরিক শাসনের নিষ্পেষণে। যে নিষ্পেষণ থেকে মুক্তি লাভের প্রবল আকাক্সক্ষার প্রতিবিম্বন ছিল বিজয় দিবস। অথচ সে নিষ্পেষনের ঘেরাটোপেই নিক্ষেপিত হতে হয়েছে আমাদেরকে বারবার। এমনতো হবার কথা ছিল না। কিন্তু হয়েছে। এমনটিই হয়েছে। তাহলে বিজয় দিবসের মর্যাদা, বিজয় দিবসের গৌরব, অহংকার কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে নেই। সে ক্ষেত্রে প্রতিবছর বিজয় দিবসকে ঘিরে যে লৌকিক অতিরেকতা, সে আনুষ্ঠানিক অতিরেকতার মূল্য কতখানি? শুধুমাত্র শাসক শ্রেণীর স্বার্থসিদ্ধি এবং এক প্রকারের বিকৃত আত্মপ্রসাদ লাভ ব্যতীত। যে শ্রেণীর কাছে সামাজিক প্রাপ্যতার বিষয়টির মূল্য একবারেই শুন্যের কোটায়।
এখানে- “তৃতীয় দুনিয়া, সমস্যাবলী এবং প্রেক্ষিত’ গ্রন্থ থেকে ‘জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সাফল্যের কারণ’- শীর্ষক নিবন্ধ থেকে একটি উদ্ধৃতি দেয়া যায়- ‘ঔপনিবেশিক এবং পরাধীন দেশগুলি জাতীয় স্বাধীনতায় পৌঁছেছে বিভিন্ন পথে। কোন কোন দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে শান্তিপূর্ণ উপায়ে, আবার, অস্ত্রের শরণ নিতে হয়েছে অন্যান্যকে। তবু বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অবস্থা অনুসারে রাজনীতিক স্বাধীনতা অর্জনের এই সব উপায় উপকরণ যত বিভিন্ন এবং অনন্য হয়ে থাকুক না কেন, এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে দীর্ঘ কষ্টসাধ্য লড়াই এর পরে এই উপাদানটা সমস্ত ক্ষেত্রেই অভিন্ন। স্বাধীনতা কঠোর লড়াই করে জিতে নিতে হয়, স্বাধীনতা আপনা থেকে আসে না”। আমাদেরজাতীয় স্বাধীনতাও আপনা থেকে আসেনি। আমাদের স্বাধীনতাকে কিনে নিতে হয়েছে। সীমাহীন গণ আন্দোলন, পর্যায়ক্রমে গণ অভ্যুত্থান এবং অবশেষে শত সহস্রর দুঃখ দুর্দশার মধ্যে দিয়ে প্রচন্ড সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে সংখ্যাতীত তাজা জীবনের জমাট বাঁধা তাজা রক্তের মূল্য দিয়ে। উল্লেখিত বত্রিশ বছরের অবশিষ্ট সতের বছরের মধ্যে প্রাথমিক সাড়ে তিন বছর চলে গেছে পুরোপুরি ধ্বংস স্তুপের ওপর প্রাণ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করে জীবন নির্মিতির প্রচেষ্টা অব্যহত রাখতে। প্রকৃতপক্ষে ঐ সময়টুকুই ছিল গণতান্ত্রিক ভাবে রাষ্ট পরিচালনার একটি নিরীক্ষাধর্মী প্রাথমিক স্তর। এর পর সামরিক শাসনের সুদীর্ঘ দুঃস্বপ্নের পর্বটি বাদ দিলে যে সময়টুকু পাওয়া যায় তার মধ্যে কয়েকটি সরকার এসেছে তথাকথিত গণতান্ত্রিক ভাবে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে যদিও সে সব নির্বাচনও নিষ্কলুষ প্রশ্নহীন নয়। তার পরেও আমরা সাধারণ মূল্যহীন অতি সাধারণ জনগণ যেভাবেই হোক না কেন মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি সে সব নির্বাচনের ফলাফলকে, ভাবতে চেয়েছি যাই-ই হোক সামরিক শাসন তো বিদায় নিয়েছে। একটা আচ্ছন্ন তৃপ্ততা বোধে সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছি। বিকল্প কিছু নেই বলে। কিন্তু সে নির্বাচিত সরকারই যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার শুরু থেকে তার অবয়বের আকার আকৃতি বদলাতে শুরু করে এবং পর্যায়ক্রমে এক সময় সামরিক শাসকের স্বৈরতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচারিতার চাইতেও আরও অধিক মাত্রায় চূড়ান্ত ক্ষমতাধর স্বেচ্ছাচারিতা সৃষ্টি করে এবং চরম স্বৈরাচারি অবস্থানে স্থির হয়ে যায়- তখন ইতিহাসের যুগ সন্ধিক্ষনে আবির্ভূত বিজয় দিবসটি হয়ে যায় উপহাসের পাত্র, করুনার বস্তু। যেহেতু গণতান্ত্রিক আচ্ছাদনের আবর্তে কথিত নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আপামর নিরীহ সাধারণ জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণের কোন উপাদানই আর অবশিষ্ট থাকে না। আর ঠিক সে মুহুর্ত থেকেই বিজয় দিবসের শরীরী বর্ণও পাল্টাতে থাকে। রক্তিম বর্ণ মাধুরী ধীরে ধীরে সাদাটে হয়ে যায়। হয়তো দেখা যায় একদিকে বিজয় দিবসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি বিশেষ শ্রেণী স্বার্থ সিদ্ধির একটি বিশেষ লক্ষ্যকে নির্ধারণ করে উল্লাস, উচ্ছাসের আতিশায্যের সীমার মাত্রা ছাড়িয়ে অত্যন্ত উৎকটভাবে নিজেকে জাহির করবার প্রাণপাতি প্রচেষ্টায় মগ্ন। অন্যদিকে অযুত, নিযুত হার-জিরজিরে সাধারণ শ্রমজীবি মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খাদ্যের অভাবে আত্মহননকেই শ্রেয়তার বিবেচনা করে শেষ পরিণতির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থাভাবে, অন্নাভাবে পিতা তার সন্তান সন্তুতিকে ন্যূনতম শিক্ষাটুকু প্রদানেও ব্যর্থ হচ্ছে। অভাব নামের একটি সর্বগ্রাসী দানবের ভয়ে মাতা তার গর্ভের সন্তানটির মৃত্যু কামনা করছে ভূমিষ্ঠ হবার পূর্বেই। তরুণীরা লাঞ্চিত হচ্ছে সন্তাসাশ্রিত সুস্থ সমাজ বিচ্ছিন্ন বর্গী তৈমুর লং, চেঙ্গিজ খানের লালসার মতো দুর্দমনীয় ত্রাসের কাছে নিজেকে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে তরুণ নামের একটি শ্রেণী অতলান্তিক অন্ধকারের কাছে। এসিডে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে তাদের নিষ্পাপ আকাক্সক্ষার শরীর। তিল তিল করে নিভে যাচ্ছে তাদের অভাবনীয় সম্ভাবনাময় উজ্জ্বলতম জীবন শিখা। আবার এর মধ্যে ব্যতিক্রম যে একেবারেই নেই তাও নয়,- দৃষ্টিভঙ্গিগত ভিন্নতা, আদর্শগত তারতম্য, কর্মসূচীগত পার্থক্য থাকার দরুণ কোন কোন সরকার (কথিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনে নির্বাচিত) হয়তো বিবেকের তাড়নাতেই হোক অথবা দায়িত্ব অথবা কর্তব্য বোধের তীব্রতা থেকে অথবা ভবিষ্যত সরকার গঠনের লক্ষ্যে আকর্ষনীয় কর্মসূচী প্রণয়নের ক্ষেত্রেই মেয়াদের অর্ধেক সময়কেই নিঃশেষ করে দেয়। অবশিষ্ট যে সময়টুকু থাকে তা’তো সম্পূর্ণ কর্মসূচী সম্পূর্র্ণভাবে সম্পন্ন হবার পূর্বেই ফুরিয়ে যায়। ফলে যা হবার তাই, কর্মসূচী অসমাপ্ত রেখেই হয়তো সরকারকে পথে বসতে হয়। পরবর্তীতে যে সরকার আসে সে সরকারের গৃহীত কর্মসূচী হয়তো পূর্ববর্তী সরকারের কর্মসূচীর সাথে এক হতে পারে না। ফলে পূর্ববর্তী সরকারের কর্মসূচীর মধ্যে কিছু কিছু হয়তো বাতিল হয়ে যায়, কিছু কিছু পরিবর্তিত থেকে যায় আবার কিছু কিছু হয়তো আকৃতিগতভাবে সংকীর্ণ হয়ে যায়। মাঝখান থেকে সাধারণ জনগণের যে স্বাভাবিক দুর্দশা সে দুর্দশা থেকে তারা আর কোন মতেই বেরিয়ে আসতে পারে না, তাদের জীবন প্রবাহের উত্তোলন আর ঘটে না। যে তিমিরে তারা থাকে সেই তিমিরেই রয়ে যায়। কিন্তু আমাদের যে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন যার কন্টাকাকীর্ণ পথ ধরে মহান বিজয় দিবসের আগমন, ইতিহাসের যুগ সন্ধিক্ষনের সৃষ্টি সে আন্দোলন তো অতলান্ত অন্ধকারে তলিয়ে যাবার, চরম দুর্দশার হাত ধরে মৃত্যুকে জড়িয়ে ধরবার আন্দোলন ছিল না। ছিল জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়, গোত্র বৈষম্যবিহীন একটি সত্যিকার অর্থেই সুশীল সমাজ নির্মাণের আন্দোলন। এখানে তদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব প্রসংগে কিছু উদ্বৃতি দেয়া হলো ঃ ০১। ১৯১৭ সালের আগে উপনিবেশ এবং আধা উপনিবেশগুলিতে সমস্ত জাতীয় মুক্তি বিপ্লব চূর্র্ণ করা হতো আন্তর্জাতিক সা¤্রাজ্যবাদের শ্রেষ্টতর ক্ষমতা দিয়ে, তখন সারা পৃথিবীতে সা¤্রাজ্যবাদের একচ্ছত্রাধিপত্য ছিল। অক্টোবর বিপ্লব পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। এই বিপ্লব জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের বিকাশের ক্ষেত্রে মোড় ঘুরিয়ে দিল। তারপর থেকে উপনিবেশ এবং পরাধীন দেশগুলিতে বৈপ্লবিক আন্দোলন বিকশিত হতে থাকল ঢের বেশি ব্যাপক পরিসরে, এই আন্দোলন সাংগঠনিক দিক দিয়ে উন্নততর হল। শুধু তাই নয়, বিপ্লবীদের মনে আসন্ন মুক্তির প্রবল আস্থা এনে দিল অক্টোবর বিপ্লব। ০২। আজকের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের ফলে দেখা দিয়েছে কতগুলি নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্রের একটা জগত, এই সব রাষ্ট্র বিশ্বপুঁজিতান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসেনি, কিন্তু তাদের বেশির ভাগ আবার সারাজ্যবাদী রাজনীতিক ব্যবস্থার অন্তভুর্ক্ত নয়। এশিয়া আর আফ্রিকার অনেক স্বাধীন রাষ্ট্র সক্রিয় সারাজ্যবাদ বিরোধী কর্মনীতি অনুসরণ করছে এবং মানব জাতীর পক্ষে প্রত্যক্ষ সংযুক্ত বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিচ্ছে। আক্রমণ আর যুদ্ধের সামাজ্যবাদী কর্মনীতির বিরোধীতায় তারা................... জাতিতে জাতিতে শান্তি আর মৈত্রী দৃঢ়তর করতে সাহায্য করে।
০৩। আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপর নতুন জাতীয় রাষ্ট্রগুলির প্রভাব বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রগতিশীল পরিবর্তন ঘটছে বলে সা¤্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি সন্ত্রস্ত। উন্নয়নশীল দেশগুলির পররাষ্ট্রনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারাগুলিকে তারা রোধ করতে চায়, তারা চায় এই দেশগুলি আজ্ঞানুবর্তী হয়ে তাদের আক্রমণাত্মক কর্মনীতির পিছন পিছন চলুক। এখন ১৯১৭ সালের সোভিয়েত ইউনিয়নের অক্টোবর বিপ্লবের সাথে আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের তুলনা করলে একটি অতি উজ্জ্বল চিত্র বেরিয়ে আসবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাথমিক গণআন্দোলনও ছিল নিরস্ত্র। কিন্তু পর্যায়ক্রমে ধাপে, ধাপে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে গিয়ে গোটা আন্দোলনই প্রত্যক্ষভাবে রূপায়নেয় সশস্ত্র আকারের এবং সশস্ত্র যুদ্ধের ভেতর দিয়েই বেরিয়ে আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন নামের একটি নতুন এবং ব্যতিক্রমী স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। জন্ম নেবার পর থেকেই রাষ্ট্রটি বিপুল গতিতে অন্ধের মতো এগিয়ে যায় শুধু সামনের দিকে সংখ্যাতীত প্রতিকূলতাকে দুমুড়ে, মুচড়ে দিয়ে। সরকারের দায়িত্ব যারা নিলেন তারা পিছনে ফিরে তাকাবার অবকাশ পেলেন না মুহুর্তের জন্যেও। এবং সাধারণ জনগণকে সীমাহীন মুক্তির অনাবিল আস্বাদ প্রদানের জন্যে যা যা করণীয় প্রয়োজন মনে করলেন তার সবই তারা করতে থাকলেন নিজেরা অথবা কোন বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণের কোন মূল্য না দিয়েই। ব্যক্তিগত স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি তাদের কাছে নোংরা উচ্ছিষ্ট বস্তু সামগ্রী বিবেচিত হল। তারা ভাবতেই পারলেন না যে ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধির জন্য দলবদ্ধ রাষ্ট্রটিকে ব্যবহার করতে হবে। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের দূর্বার অগ্রগামীতা সারা বিশ্বের অন্যান্য পুুঁজিতান্ত্রিক রাষ্ট্র গুলোর ওপরেও এক প্রকারের প্রভাবগত ছায়া বিস্তার করতে থাকে। সাথে সাথে সে সব রাষ্ট্রের সাধারণ জনগনের Mindset -এও বিশেষ এক ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে চলে। এই চলার মধ্যে কিন্তু আর কোন প্রকারের যতি বা বিরতি থাকলো না। আর এই চলার ভেতর দিয়েই এক সময় কোন কোন পুঁজিতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা জাতি, ধর্ম, গোত্র, বর্ণ এবং অর্থনীতিক বৈষম্যবিহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলবার পথে অগ্রসর হতে থাকে এবং এক সময় লক্ষ্যে পৌঁছুতেও সক্ষম হয়। সোভিয়েত দৃষ্টান্ত তাদের কাছে একটি নবতর মডেল হিসাবে তাদের চিন্তা, চেতনায় পোক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। সাধারণ জনগনের সার্বিক অবস্থানেও পরিবর্তন সাধিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে, ভাগ্যকে তারা নিজেরাই গড়ে তুলবার দায়িত্ব গ্রহণ করে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে। প্রতিশ্রুতির ভিত থেকে তাদের কোন নিপীড়ন, নির্যাতন অথবা কোন প্রলোভনের মাধ্যমে টলানো যায় না কোনক্রমেই। কিন্তু আমাদের দেশে কি হলো? আমাদের মুক্তি আন্দোলনও তো ছিল সোভিয়েত মুক্তি আন্দোলনের চাইতেও উচ্চমার্গীয়। প্রচন্ড সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে সমুদ্র সমান রক্তস্রোতের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জিত হলো বাংলাদেশের। রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জিত হলো বটে, কিন্তু মুক্তি? জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের দুঃসহ পীড়ন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কি অনাবিল আনন্দে উল্লাসিত হতে পারল এই বিগত বত্রিশ বছরে? পারলো না। এবং অবশ্যই পারলো না। এবং এই না পারার পেছনে, ব্যর্থ হবার পেছনে বহু সংখ্যক কারণের মধ্যে অত্যন্ত অন্যতম একটি কারণ বোধ করি নেতৃত্বের বিচক্ষণতার নিদারুন অভাব এবং সংকট। এবং তার সাথে যোগ হলো ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধির প্রবল লালসা। এখন যাকে আমরা ইংরেজীতে INTELLECTUALITY হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হই। অর্থাৎ কিছু বিশেষ গোষ্ঠি কর্তৃক যা আমাদেরকে গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু এটি আসলেই INTELLECTUALITY নয় বরং INTELLECTUALITY CRISIS. এবং এই INTELLECTUALITY CRISIS আমাদের নেতৃত্বকে অসার করে দেবার ফলে আমরা সুমহান স্বাধীনতা অর্জন করেও সার্বিক মুক্তির আস্বাদ থেকে আজও বঞ্চিত। INTELLECTUALITY প্রসঙ্গে একটি উদ্বৃতি দেয়া যেতে পারে ‘AS A WORD, INTELLIGNCE IS CLOSELY RELATED TO’’ INTELLECT’ WHICH IS A COMPREHENSIVE TERM FOR OBSERVING, UNDERSTANDING, THINKING, REMEMBERING AND ALL WAYS OF KNOWING AND OF GETTING KNOWLEDGE. INTELLECTUAL ACTIVITY YIELDS KNOWLEDGE, INTELLIGENT ACTIVITY DOES THIS AND SOMETHING MORE. IT IS USEFUL HELPUL IN SOLVING A PROBLEM AND REACHING A GOAL, COUNTING, FOR AN EXAMPLE, IS AN TNTELLECTUAL ACTIVITY AND YIELDS KNOWLEDGE, BUT WHETHER THIS KNOWLEDGE IN USEFUL OR NOT DEPENDS ON THE MATTER IN HAND. COUNTING THE CHAIRS IN YOUR ROOM AND THE GUESTS YOU EXPECT, AN INTELLIGENT WAY OF FINDING OUT WHETHER YOU HAVE ENOUGH CHAIRS, BUT COUNTING THE LETTERS ON A PAGE WOULD SCARCELY BE AND INTELLIGENT START TOWARDS LEARNING A LESSON PRINTED ON THE PAGE. INTELLIGENCE MEANS INTELLECT PUT TO USE- IT IS THE USE OF INTELLECTUAL ABILITIES FOR HANDING A SITUATION OR ACCOMPLISHING ANY TASK (ROBETS AND DONALD G MAQUISt PSYCHOLOGY A STUDY OF MENTAL LIFE). মনোাস্তত্ত¡ বিজ্ঞানের দিক থেকে Intelligence কথাটি Intellect শব্দটির সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত যাতে রয়েছে পর্যবেক্ষণ করবার, জানবার, বুঝবার , চিন্তা করবার এবং জানবার সকল পথ অনুধাবন করবার এবং সে অনুভবের মধ্যে দিয়ে জ্ঞান আহরণ করবার বিষয়টির একটি তীব্র বুদ্ধিদীপ্ত শর্ত পূরণ না করলে অথবা এ শর্ত মেনে না চললে Intellectual শব্দটি মূল্যহীন হয়ে যায়, অর্থাৎ বিচক্ষণতা বলে আর কোনো শব্দ থাকে না। সেদিক থেকে শুধু এই রাষ্ট্র পরিচালনাই নয় অন্যান্য ক্ষেত্র সমূহ পরিচালনার বিষয়টিও স্থবির হয়ে পড়ে। অর্থাৎ অগ্রসরমানতার গতিও রুদ্ধ হয়ে যায়। যা হয়েছে আমাদের এই রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে। অসীম বিচক্ষণহীনতা, অদক্ষতার কবলে পড়ে আমাদের মাতৃভূমিটিও হয়ে পড়েছে স্থবির হয়ে। কোনোভাবেই সম্পূর্ণ স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে প্রচন্ড গতি শক্তির মাধ্যমে অগ্রসর হয়ে সকল প্রকার বৈষম্যের কবল থেকে নিস্ক্রান্ত হয়ে সাধারণ জনগণকে মুক্তির আস্বাদে সিক্ত করতে পারছে না। এবং পারবেও নাÑযতক্ষণ না সূতী² বিচক্ষণতা ও দক্ষতা অর্জন করে সকল ব্যক্তি স্বার্থের প্রলোভন থেকে মুক্ত হয়ে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে স্বদেশকে নিরঙ্কুশভাবে ভালবেসে সংশ্লিষ্ট সরকার অথবা দল সমূহ সর্বাধিক জনকল্যাণে সার্বিক কল্যাণমুখী কর্মসূচী প্রণয়ন করে সে কর্মসূচী বাস্তবায়নে এগিয়ে এসে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে পারবে অবিরাম।
আজকে আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জনের সুদীর্ঘ ৩২ বছরের কন্টকাকীর্ণ সঠিক উত্তর খুঁজে পাই না। নিজেরাই সংকুচিত হয়ে যাই। এ যে আমাদের সার্বিক জাতীয় জীবনের কতখানি দীনতা তা লেখনীর মাধ্যমে ভাষায় প্রকাশ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। শুধুমাত্র লজ্জা আর ঘৃণার আবরণ দিয়ে যেন দীনতাকে আবৃত করে স্বাভাবিকতার ভান করা ছাড়া। “যে সব দেশ মুক্তি অর্জন করেছে তাদের রাজনীতিক অধিকার সম্প্রসারণ এবং দৃঢ় করা যেমন তাদের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা দূর করবার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় তেমনি এই অনগ্রসরতা দূর করাটা প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য অপরিহার্য, এর সংগে সংগে অধিকতর রাজনীতিক স্বাধীনতা হলো বিভিন্ন সামাজিক- অর্থনৈতিক সংস্কারের গুরুত্ব এবং পরিধির একটা ফল। জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের চলতি পর্বে সামাজিক অর্থনীতিতে উপাদানটা চূড়ান্ত গুরুত্ব সম্পন্ন। ঠিক যেমন দুই বিশ্ব ব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রের পুরোভূমিতে রয়েছে অর্থনীতিক প্রতিযোগিতা।” ( তৃতীয় দুনিয়া, পৃষ্ঠা¬ ২১-২২) তাহলে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের মূল কথাটিই হলো অর্থনীতিক উপাদান, আর একটু বিশ্লেষণ করে বললে বলতে হয় অর্থনৈতিক বৈষম্যের সমূল উৎপাটন, যদি এই উৎপাদনটি ঘটানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো তাহলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ গোত্র, ইত্যাদি বিষয়ের ভেতরকার বৈষম্য দূর করে একটি সুসম শ্রেণীবিন্যাস করণও হয়তো সম্ভব হতো ন্যূনতমভাবে। মানুষের স্তরভেদও একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এসে পৌঁছুতে পারত। কিন্তু তা হয় নি এবং কেন হয়নি সে প্রশ্নের উত্তর এ রচনার একটি অংশে আমি আগেই দিয়েছি। পুনরায় দেবার আবশ্যিকতা নেই। এবার বর্তমান কালের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর কিছু আলোচনা করা যাক। যে প্রেক্ষিতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল আমাদের মহান বিজয় দিবসের ------- .
বর্তমানে এ হতভাগ্য দেশটি পরিচালনায় এবং দেশটির পরিচর্যায় যারা নিয়োজিত তাদের দিকে দৃষ্টি ফেরালে আমাদে দৃষ্টি সীমায় কী প্রতিভাত হয়? দলবদ্ধ ভাবে কিছু অবিচক্ষণ, অদক্ষ লোক এমনকি যাদের চিন্তাধারা, বুদ্ধিবৃত্তির ভিতটিও পরিপোক্ত এবং পরিপক্ক নয় বরং তারাই কী বিশাল সংখ্যক সাধারণ জনগণের কল্যাণ সাধনের জন্য কর্মসূচী প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের কর্মে দায়িত্বপ্রাপ্তযারা আত্মিক দিক থেকে নিজেদের কল্যাণ সাধনেই চূড়ান্ত মোক্ষ, যাদের দূরদর্শিতা নিছক এক ছেলেমানুষি পর্যায়ের। তাদের পক্ষে সাধারণ মানুষের বৈষম্য নিরসন, অর্থনৈতিক বৈষম্যের উৎপাটন, শ্রেণী বিন্যাসিত সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণের কৌশল উদ্ভাবন ইত্যাদি কী করে সম্ভব? তার ওপর তাদের মধ্যে আবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কিছু সংখ্যক নির্দিষ্ট চিন্তাধারার মানুষ যারা আমাদের স্বাধীনতাকেই দেখেন এক তী² বক্র দৃষ্টিতে, স্বাধীনতাকে মনে করেন নিকৃষ্টতম কুকুরের উচ্ছিষ্ট হিসেবে। অথচ ব্যক্তি অথবা দলীয় যে কোন স্বার্থেই হোক না কেন তাদেরকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভাগ্যহীন এ দেশটির ভাগ্য নির্মাণের বিশেষজ্ঞ হিসেবে। সত্যিই কী সৌভাগ্য আামাদের যে, তাদেরই ‘যোগ্যতম’ সার্বিক পরিচর্যায় আমদের পাঁজরের হাড়গুলো চর্মভেদ করে বাইরে বেরিয়ে এসে আমাদের অক্ষমতা ও অসহায়ত্বকে উপহাস করছে নিয়ত বিকটভাবে! এসব দেখবার জন্যই কি বত্রিশ বছরের একটি বিশেষ দিনে-“বিজয় দিবস”-নামের প্রাণহীন একটি জড় উপলব্ধি এসে আমাদের দোরগোড়ায় কড়া নাড়তে থাকে। ব্যাকুলিত দৃষ্টি দিয়ে আকুতি জানায় ‘তোমরা আমায় ভুলে যাও। আমাকে আর আহবান করো না। আমাকে যেন আর কোনদিনই তোমাদের কাছে আসতে না হয়। আমি লজ্জা পাই, আমার ঘৃণা হয় তোমাদের মতো মানুষ নামের অস্পৃশ্য কীটগুলির সামনে এসে দাঁড়াতে। তোমরা আমার মর্যাাদা ধূলির সাথে মিশিয়ে দিয়েছ। তোমরা তোমাদের জন্য রেখে যাওয়া তোমাদের পূর্ববর্তীদের রক্তধারা অশুদ্ধ করেছো। তোমাদের জন্যে অকাতরে উৎসর্গীকৃত তাদের পবিত্র আত্মাকে কলুষিত করেছ। ধিক্ তোমাদের নীতিবোধের প্রতি! ততোধিক ধিক্ তোমাদের মনুষ্যত্ব বোধের প্রতি!! প্রার্থনা করিÑ আর কোনদিনও যেন তোমাদের সামনে এসে আমাকে দাঁড়াতে না হয়। তোমাদের বিকৃত উপহাস দেখে কখনও যেন আমাকে মরমে মরে যেতে না হয়।’ (প্রবন্ধটি ১২-১২-২০০৩ খ্রিস্টাব্দে রচিত)